মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পরিবহন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি ও হয়রানি:রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া সড়কে সিএনজি যাত্রীদের দূর্ভোগ চরমে খুটাখালীর মেধেরখালের চর থেকে ভাসামান লাশ উদ্ধার চকরিয়ায় অজগর সাপ উদ্ধারঃঅভয়ারণ্য অবমুক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে লক্ষ্য করে সাবেক এমপি বদির গুলি ছোড়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন বনভূমিতে স্হাপনা নির্মাণকালে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো বন বিভাগ ফ্রি ফায়ার” এ পরিচয়ে খুলনার মেয়ে টেকনাফে বিয়ে;অতঃপর মরদেহ উদ্ধার কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: নিরাপদ নুরুল আবছারকেই পছন্দ ভোটারদের ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন পেকুয়ায় লবণ বাচাঁতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই চাষির মৃত্যু! কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন:জমে উঠেছে মুজিব-আবছারের ভোটের লড়াই

স্বাধীনতার ৫২ বছর পর বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী

আবুল হাশেম.ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক রূপালী সৈকত
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৯৫২ বার পঠিত


আবুল হাশেম.ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক রূপালী সৈকত:

ফজলুল কাদের চৌধুরী তখন টগবগে যুবক। দেশজুড়ে বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনিও ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে চালিয়ে যান মরণপণ যুদ্ধ। তবে দেশ স্বাধীনের অর্ধশত বছর পেরিয়েও এতদিন তার সেই স্বীকৃতি ছিল অধরা। অবশেষে গত ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ইং বাংলাদেশ গেজেটের ৫৪২ নম্বরে কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা ফজলুল কাদের চৌধুরীর নাম প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি সেই গেজেটের কপি হাতে পেয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার পরিবার। এতে খুশি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্য ও তার সতীর্থ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

তথ্যসূত্রে জানাযায়,ফজলুল কাদের চৌধুরীর পিতার নাম মরহুম আবদুস সোবহান চৌধুরী, মাতা-মরহুম গুলফরাজ বেগম চৌধুরী। ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৯৫০ সালের ২০জুন তৎকালীন চকরিয়া থানার পালাকাটা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। বর্তমানে কক্সবাজার পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। ব্যক্তি জীবনে ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। তার ছেলে মেয়েরা সবাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষীত।তিনি চকরিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৬৭ সালে এস.এস.সি, ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রামস্থ নাজিরহাট কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৩ সনে একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। নাজিরহাট কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়ে ১১দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণের মধ্যদিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করেন। এ সময় বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্থানের কারাগারে বন্দী ছিলেন।মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানির নেতৃত্বে বাঙ্গালীর কঠোর আন্দোলনের ফলে জেনারেল আয়ুব শাহি বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে বাধ্য হয়। এরপর স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন তিনি। এ সময় কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুুদ্ধ করেন। স্থানীয় ভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে চকরিয়া থানায় পাকবাহিনীর বিরদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সরকারি পরিবহন পুল ভবন সচিবালয় সংযোগ সড়ক, ঢাকা গেজেট অধিশাখা স্মারক নং-৪৮,০০,০০০০.০০৪.৩৭.২১৮.২০২৩- ৫৯৭(১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ,২৬ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ )প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২ (২০২২ সনের ১৫নং আইন) এর ৬(খ) ধারা মতে ক্রমিক নং ৪১, এন্ট্রি নং ৫-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জামুকা’র ৮৭তম সভার আলোচ্যসূচি ০৭ এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেসামরিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে কক্সবাজার জেলার তালিকায় ক্রমিক নং ১৫৬,গেজেট নং ৫৪২ মূলে ফজলুল কাদের চৌধুরীকে বীর মুাক্তযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় স্বাধীনতার ৫২ বছর পর।

প্রাপ্ত তথ্যমতে জানাযায়,মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। চকরিয়া ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের চার বছর শিক্ষকতার পর কক্সবাজার শহরে এসে পুরোদমে সাংবাদিকতা পেশায় মনোনিবেশ করেন।

সূত্রে আরো জানাযায়, ১৯৮২সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক নয়াবাংলার উপ-সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সাংবাদিকতা পেশায় সূচনা করেন। এ সময় রেডিও বাংলাদেশ চট্টগ্রামে জনসচেতনতামূলক জীবন্তিকা নাটিকা লিখতেন। ২০০০ সালের ১জুন জাতীয় পত্রিকা দৈনিক যুগান্তরে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পত্রিকা দৈনিক সমকাল পত্রিকায় স্টাফ রির্পোটার(কক্সবাজার) হিসাবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৫ বছর পর দৈনিক যায়যায় দিন পত্রিকার বৃহত্তর কক্সবাজারের আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।এছাড়া তিনি কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক কক্সবাজারের প্রধান প্রতিবেদক ও দৈনিক বাঁকখালী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।বর্তমানে ফজলুল কাদের চৌধুরীর সম্পাদনা ও প্রকাশনায় কক্সবাজার থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে জেলার পাঠক প্রিয় দৈনিক রূপালী সৈকত।এভাবে দীর্ঘ প্রায় ৪২ (১৯৮২-২০২৩) বছর যাবতকাল সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত আছেন। বর্তমানে ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০২১ সালে নতুন করে কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলা প্রেসক্লাবের ২৮৫ জন সংবাদকর্মী নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাব গঠিত হয়। তিনি কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাব এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এছাড়া সাংবাদিকতার পাশাপাশি পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সাংবাদিকদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে সোনাদিয়া প্যারাবন নিধন, কুতুবদিয়ার বিএনপি চিংড়ি প্রকল্প, টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে প্যারাবন নিধন সহ কক্সবাজার জেলায় প্যারাবন ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত সংগঠিত করার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।এককথায় তিনি জেলায় পরিবেশ যোদ্ধা হিসেবে বেশী সুপরিচিত রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী। কক্সবাজার শহর রক্ষা বেষ্টনীর ঝাউগাছ কেটে কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে দ্বিখন্ডিত করে পর পর ২টি জেটি নির্মাণ করা হয়। ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে সাংবাদিক- জনতার দুর্বার আন্দোলনের মুখে সে জেটি গুলো উচ্ছদ করতে বাধ্য করা হয়।তৎকালীন বিএনপির সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদের মালিকানাধীন পর্যটকবাহী জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাতায়াতের জন্য জেটি ০২টি নির্মাণ করা হয়। আন্দোলনের ফলে জেটি গুলো উচ্ছেদ হয়। জেটি উচ্ছেদের আন্দোলন করতে গিয়ে কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউজে ফজলুল কাদের চৌধুরীকে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ সময় বাহারছড়া এলাকার মাহবুব নামের একজন পিয়নের নিকট থেকে খবর পেয়ে আত্মগোপন করে প্রাণে রক্ষা পায়। এছাড়াও চকরিয়া উপজেলার মেধা কচ্ছপিয়া বন রেঞ্জের শতবর্ষী মাদার গর্জন গাছ শুমারি ও রক্ষায় ব্যাপক আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দেন এবং চকরিয়ার ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেন তিনি। সর্বসাকুল্যে কক্সবাজার জেলার প্রকৃতি রক্ষায় এখনো সফল নেতৃত্ব প্রদান করে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়া মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে ম্যানগ্রোভ প্যারাবনটি প্রাকৃতিক জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ ছিলো। দ্বীপটির সবুজ প্যারাবন কেরোসিন ও পেট্টোল দিয়ে জ্বালিয়ে সেখানে চিংড়ি প্রকল্প করেন তৎকালীন বি.এন.পির এম.পি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। এর বিরুদ্ধে বিশাল আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল তারই নেতৃত্বে। বিশাল আন্দোলনে নেতৃত্ব থাকার কারনে তার বিরুদ্ধে ২টি কোটি টাকার মানহানি মামলা করেন তৎকালীন বি.এন.পির সাংসদ আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। দুর্বার আন্দোলনের মুখে তিনি মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন এবং সাংবাদিকদের সামনে আবার নতুন করে প্যারাবন তৈরীর অঙ্গীকার করেন।

কক্সবাজার জেলায় ফজলুল কাদের চৌধুরী নেতৃত্ব প্রদানকারী বিভিন্ন সরকারী ও বে-সরকারী সংগঠন সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে *সভাপতি, কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাব * সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক রূপালী সৈকত * সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখা *সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম *সাবেক সভাপতি, উদীচী, কক্সবাজার জেলা সংসদ * সভাপতি, সমাজ সেবা অধিদপ্তরাধীন কক্সবাজার শহর সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প পরিষদ সাবেক সভাপতি, কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), *সাবেক সভাপতি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি * নির্বাহী পরিচালক গ্রীণ কক্সবাজার কর্তৃক পরিচালিত কক্সবাজার জেলা *অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কক্সবাজার মহিলা কলেজ * অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কক্সবাজার কেজি ও মডেল উচ্চ বিদ্যালয় * অর্থ সম্পাদক, অপরাধী, সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি, (জেলা সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃক পরিচালিত) * আজীবন সদস্য রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কক্সবাজার * আজীবন সদস্য পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, কক্সবাজার জেলা (ঋচঅই). * সদস্য-বাংলাদেশ জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ, কক্সবাজার ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs