বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পরিবহন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি ও হয়রানি:রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া সড়কে সিএনজি যাত্রীদের দূর্ভোগ চরমে খুটাখালীর মেধেরখালের চর থেকে ভাসামান লাশ উদ্ধার চকরিয়ায় অজগর সাপ উদ্ধারঃঅভয়ারণ্য অবমুক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে লক্ষ্য করে সাবেক এমপি বদির গুলি ছোড়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন বনভূমিতে স্হাপনা নির্মাণকালে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো বন বিভাগ ফ্রি ফায়ার” এ পরিচয়ে খুলনার মেয়ে টেকনাফে বিয়ে;অতঃপর মরদেহ উদ্ধার কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: নিরাপদ নুরুল আবছারকেই পছন্দ ভোটারদের ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন পেকুয়ায় লবণ বাচাঁতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই চাষির মৃত্যু! কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন:জমে উঠেছে মুজিব-আবছারের ভোটের লড়াই

একান্ত ভাবনা: ইসলামের দৃষ্টিতে রিজিকের ফায়সালা ও স্তর বিন্যাস

এম আর আয়াজ রবি
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১২৯ বার পঠিত

।। এম আর আয়াজ রবি।।

পার্থিব জীবনে, সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন ধারণ,ও বেঁচে থাকার জন্য রিজিকের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহতায়ালার’রাহমানুর রাহীম’এই সিফাত নাম থেকেই তাঁর জাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। কারণ তিনি জীবন ধারণের সব মুল্যবান উপাদানসমূহকে মানুষ ও সৃষ্টিকুলের প্রতি বিনামুল্যে বিতরণ করেছেন। বেঁচে থাকার আনুসঙ্গিক উপাদানসমুহ যা পরিবেশেরও মৌলিক উপাদান হিসেবেও বিবেচিত আলো, বাতাস ও পানি একপ্রকার তিনি বিনামুল্যেই বিতরণ করেছেন। সাথে ১ লক্ষ ২৪ হাজার মাকলুকাতের রিজিকের বন্টন করেছেন একান্ত সুনিপুণ হাতে। তিনি পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে মানুষকে হালাল উপায়ে রিজিক অন্বেষণের নির্দেশ দিয়েছেন।

যেদিন থেকে আমি অবগত হয়েছি, আমার রিজিক আমার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত এবং রিজিকের ফায়সালা উপর থেকেই ( তাঁর থেকেই) হয়। যখনই জানলাম পৃথিবীতে আমার বলতে আসলেই কিছু নেই, সব কিছু মহান আল্লাহ তায়ালার আমানত মাত্র-সেদিন থেকে আমি অর্থ- বৈভব, লোভ-লালসা, সম্পদ আহরণ ও সম্পদ কুক্ষিগত করার কোন ধরণের তাড়া ও ব্যাকুলতা অনুভব করিনা। কাউকে যেমন নিজের প্রতিদ্বন্ধী ভাবি না, তেমনিভাবে নিজের অবস্থান, ভাগ্য বা কপাল নিয়ে কোনপ্রকার আফসোস করিনা, বৈধ/অবৈধ কাড়ি কাড়ি সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়নি। নিতান্ত সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হবার চেষ্টা করেছি মাত্র!

অন্যদিকে কারো সফলতা দেখে, উন্নতি বা অবস্থার পরিবর্তন দেখে আমি কোনভাবেই কাতর হইনি। জীবন পরিক্রমায় যা পেয়েছি তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করেছি। যা পেয়েছি তা আমার ভাগ্যে বা ললাটে ছিল এবং যা পাইনি তার কোনটাই আমার রিজিকে ছিলো না-এটাই বিশ্বাস করেছি, মেনে নিয়েছি এবং সেজন্য আফসোস করিনি কোনদিন। আমি বিশ্বাসে-নিশ্বাসে, অস্তিত্ব ও অনুভবে শান্তির নিশ্বাস ছেড়ে সবকিছু আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। কারণ তিনি হচ্ছেন ‘খাইরুন মাক্বেরীন’।

আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করি, নিজের রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তার কিচ্ছু নেই-যা আমার ও আপনার জন্য বরাদ্দ তা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না, এই ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালা কাউকে দেননি। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকলে রিজিক আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো ঝরেনা, তা তালাশ করে, অনুসন্ধান করে নিজের করে নিতে হয় -এটাই চরম বাস্তবতা।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বর্ণিতে হয়েছে, ‘অতঃপর যখন জুমার নামাজ শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’ (সূরা জুমুয়াহ, আয়াত, ১০)

যেদিন থেকে আমি জানতে পেরেছি, আমার রিজিক আমি ছাড়া অন্য কেউ ভোগ করতে পারবে না, অন্যান্যদের মতো আমার রিজিকের ফায়সালা উপর থেকে ( মহান আল্লাহর কাছ থেকে)-সেদিন থেকে আমার হৃদয়ে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি তৈরি হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ!

রিজিক অনুসন্ধানের জন্য মানুষ হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে। রিজিক নিয়ে মানুষ অনেক দুশ্চিন্তায় ভোগে। পৃথিবীতে প্রেরিত প্রত্যেকের রিজিক আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। সবাই তার জন্য নির্ধারিত রিজিক লাভ করবেন নির্দিষ্ট নিয়মে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তায়ালা বিভিন্ন জায়াগায় রিজিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। আল্লাহর দেওয়া রিজিক নিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদীস নিয়ে একটু চর্চা করতে গিয়ে নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলো আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

‘পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের জীবিকার দায়িত্ব (মহান) আল্লাহর। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই (উল্লেখ) এক সুবিন্যস্ত কিতাবে (লওহে মাহফুজে) রয়েছে।’ (সূরা হুদ, আয়াত, ৬)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত, ২২)

মানুষ রিজিকের জন্য চেষ্টা করে। চেষ্টা করা স্বাভাবিক রীতি। তবে রিজিকদাতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। কোরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ হলেন তিনি, যিনি রিজিকদাতা এবং মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।’ (সুরা আয যারিয়াত, আয়াত, ৫৮)

মানুষ চেষ্টা করার পরও অনেক সময় রিজিকে কমবেশি হয়। এটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পরীক্ষা। কোরআনে এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনো ভয়ভীতি, কখনো অনাহার দিয়ে, কখনো তোমাদের জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। (এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ করতে হবে) তুমি ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৫৫)

যদি আল্লাহ তায়ালা তার সব বান্দাদের প্রচুর রিজিক দান করতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। বরং তিনি যে পরিমাণ চান তার জন্য ততটুকুই রিজিক বন্টন করেন।’ (সূরা শুয়ারা, আয়াত, ২৭)।

অন্যদিকে রিজিকের বিভিন্ন স্তর রয়েছে।
রিজিকের স্তরসমুহ নিম্নরুপ:
০১. রিজিকের সর্ব নিম্ন স্তর:
রিজিকের সর্বনিম্ন স্তর হলো আর্থিক সচ্ছলতা। এটাই একমাত্র স্তর নয়; রিজিক বলতে শুধু ধনসম্পদ, টাকাপয়সায় সচ্ছলতা অর্জন—এমনটি বোঝা এবং এমন বুঝের ওপর অটল থাকা অজ্ঞতার পরিচায়ক। রিজিকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, দুনিয়াতে যা কিছু মানুষকে উপকৃত করে, সবই রিজিক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘ধনসম্পদ আর সন্তানসন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৪৬)

০২. রিজিকের সর্বোচ্চ স্তর:
রিজিকের সর্বোচ্চ স্তর হলো শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘এবং আমি যখন অসুস্থ হই; তখন তিনিই (আল্লাহ) আমাকে সুস্থতা দান করেন।’ (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ৮০)
০৩. রিজিকের সর্বোত্তম স্তর:
রিজিকের সর্বোত্তম স্তর হলো পুণ্যবতী স্ত্রী ও নেককার সন্তানসন্ততি। একজন স্বামীর জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ পুণ্যবতী স্ত্রী। একইভাবে একজন স্ত্রীর জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ পুণ্যবান স্বামী। নারীর সংস্পর্শ ছাড়া কোনো পুরুষের জীবন এবং পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়া কোনো নারীর জীবন পূর্ণতা লাভ করে না। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী যদি পুণ্যবতী হন এবং স্বামী যদি হন পুণ্যবান, স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় সংসার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পার্থিব জগৎ হলো ক্ষণিকের উপভোগের বস্তু। আর পার্থিব জগতের সর্বোত্তম সম্পদ হলো পুণ্যবতী স্ত্রী।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৬৫৬৭)

০৪. রিজিকের পরিপূর্ণ স্তর:
রিজিকের পরিপূর্ণ স্তর হলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। প্রত্যেক মুমিন-মুসলিম বান্দার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৭২)

‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’। সুরা আল আনআম, আয়াত-১৬২।

(লেখক: কলামিস্ট, পরিবেশ ও মানবাধিকারকর্মী)

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs