শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
চকরিয়ায় সাংবাদিক শাহ আলমের উপর হামলা ও রাইচমিল লুটের ঘটনায় দুই মামলা আসামি হলেই গ্রেপ্তার নয়, মানতে হবে নতুন নির্দেশনা কক্সবাজারের সংকট-সম্ভাবনার কথা বলতে “আওয়াজ”র আত্মপ্রকাশ জুলাই ফাউন্ডেশনের অর্থ আত্মসাত, নাগরিক কমিটির নেত্রী বহিষ্কার। প্রবেশপত্র না পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি উখিয়ার ১৩ শিক্ষার্থী, প্রধান শিক্ষক আটক ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ নেতাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার পাঁয়তারা কক্সবাজার সমুদ্রে যৌথ অভিযানে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ সাত রোহিঙ্গা আটক পূর্বাচল প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি: হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ট্রাম্পের শুল্ক থেকে তিন মাস রেহাই পাবে বাংলাদেশসহ অনেকে, চীনের কাঁধে আরো বোঝা খুটাখালীতে অপহৃত যুবকের মোটরসাইকেল উদ্ধার

দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় পানিতে ডুবে দুইশতাধিক শিশুর মৃত্যু !

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৭৪৩ বার পঠিত

দৈনিক রূপালী সৈকত রিপোর্ট:
কুতুবদিয়া বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি একটি দ্বীপ, যা কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন। এ দ্বীপে সরকারী হিসেব মতে প্রায় দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। দ্বীপের লোকজনের প্রধান আয় লবণ চাষ, সাগর থেকে মৎস্য আহরণ, ক্ষেত খামার এবং অন্যান্য চাষাবাদ ছাড়া বড় কোন আয়ের কিংবা বিকল্প কোন পথ নাই। এ দ্বীপের লোকজন প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং সাগরের ভাঙ্গনে বসতভিটা এবং ফসলি জমি হারিয়ে উদ্ভান্ত হচ্ছে। ফলে অনেকে দ্বীপের আবাসস্থল ত্যাগ করে অন্যত্রে বসতভিটা গড়ে তোলেছে প্রতিনিয়ত। যাদের কিছুটা সচ্ছলতা আছে তারাও দ্বীপের বসতভিটা ছেড়ে অন্যত্রে বসতবাড়ী গড়ে তুলেছে। ফলে যে সকল লোক নিম্ন আয়ের কিংবা কোন রকমে খেয়ে পরে বাঁচতে পারে বা যাদের অন্যত্রে মাথা গুঁজার মতো বিকল্প কোন আবাস নেই তারাই মূলত দ্বীপে স্থায়ী আবাস হিসেবে বসবাস করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় দ্বীপের প্রতিটি পরিবারে একাধিক সন্তান থাকে। পরিবারের কর্তা তথা পুরুষ উপার্জনের তাগিদে সাগরে কিংবা লবনমাঠে কিংবা চাষাবাদের অন্য কোন কাজে যায়। পরিবারের মা গৃহস্থলীর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে ফলে বাড়ীতে থাকা শিশু/কিশোরের প্রতি একজন মায়ের পক্ষ থেকে দেখাশুনা করার সুযোগ থাকে না। শিশুরা খেলাধুলা করার সময় খেলাধুলার ফাঁকে মায়ের অজান্তেই বাড়ীর আঙ্গিনায় থাকা কুয়া, ছোট গর্ত, পুকুর কিংবা বাড়ীর পার্শ্বস্থ খাল/বিলের পানিতে নেমে পড়ে। যার পরিণতি পানিতে ডুবেই শিশুর মৃত্যু। এ ভাবে ধারাবাহিকহারে দ্বীপে শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সকাল কিংবা বিকালে প্রায়শই সংবাদ আসে এক বা একাধিক শিশু পানিতে ডুবে মার যাচ্ছে। কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারী তথ্যমতে দ্বীপে ১৮ সেপ্টেম্বর(সোমবার)পুকুররে পানতিে ডুবে আব্দুল মোকাররম (৭) ও জান্নাতুল বকয়ো (৪) এবং তাবাসসুম (১৫)নামরে তনি শশিুর মৃত্যু সহ গত তিন বছরে পানিতে ডুবে মারা গেছে প্রায় দুইশতাধিক শিশু। যার মধ্যে ২০২০ সালে ৮১ জন। ২০২১ সালে ৫৪ জন। ২০২২ সালে ৫৬ জন এবং ২০২৩ সালে চলতি মাস পর্যন্ত ৩৮ জন।

দ্বীপে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার রোধে সরকারী/বেসরকারীভাবে দৃশ্যমান কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে দ্বীপে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার রোধে কিংবা নিরসনে ভুক্তভোগী পরিবারসহ সর্বস্তরের মানুষের সাথে কথা বলে বেশ কিছু বিষয় উঠে আসে।

এই বিষয়গুলো অবলম্বন করলে কেবল দ্বীপে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার রোধ করা সম্ভব বলে সর্বস্তরের লোকজনসহ অভিজ্ঞ মহলের অভিমতঃ
১। যে সকল পরিবারের বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় কুয়া, ছোট কূপ, জলাশয়, পুকুর, ডোবা, খাল ইত্যাদি আছে এ গুলো সনাক্ত করা কিংবা জরীপ করে চিহ্নিত করা। ২। এ সব এলাকায় শিশুর দেখা শুনায় আরো বেশী যতœশীল কিংবা সচেতন হওয়ার জন্য ব্যাপকহারে প্রচার করা। ৩। প্রচারের ক্ষেত্রে মাইকিং করা, প্রচারপত্র বিলি করা, উঠান বৈঠক করা, ডুর টু ডু নক করে পরিবারে লোকজনকে সচেতন করা। ৪। প্রতিটি মসজিদ/মন্দির থেকে মসজিদ/মন্দিরের প্রধানগণের মাধ্যমে প্রচার করা। ৫। হাঠ বাজারে কিংবা জনসমাগমস্থলে পথ নাট্য তৈরী করে সচেতন করা। ৬। মক্তবে, কিন্ডার গার্টেনে কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, উচ্চ বিদ্যালয়ে, কলেজ/মাদ্রাসায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা। ৭। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে একটি করে শিশুদের জন্য সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৮। কোন ভাবেই যদি শিশুরা পানিতে পড়ে যায় তৎক্ষনাৎ উদ্ধার করে কিভাবে পানি পেট থেকে বের করা হয় এ সংক্রান্তে প্রতিটি পরিবারে ফার্স্ট এইড চিকিৎসার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা।৯। যে সকল বসতবাড়ীর অঙ্গিনায় কুয়া, ছোট কূপ, জলাশয়, পুকুর, ডোবা, খাল কিংবা নদী আছে সে সব স্থান থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখতে প্রয়োজন মতে ঘেরাবেড়া দিয়ে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা করা কিংবা উঁচু বাঁধ/উচু দেয়াল দিয়ে শিশুর গমানাগমনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা। ১০। বাড়ীর আঙ্গিনার পাশে অপ্রয়োজনী কুয়া, ছোট কূপ, জলাশয়, পুকুর, ডোবা, খাল ইত্যাদি ভরাট করে সমতল ভূমি তৈরী করা। ১১। বাড়ীর আঙ্গিনায় স্থিত কুয়া, ছোট কূপ, জলাশয়, পুকুর, ডোবা, খাল ইত্যাদির নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেতনাতা সৃষ্টি করা। ১২। বছরের বেশিরভাগ সময় দ্বীপের দক্ষিণ ধুরুং এবং উত্তর ধুরুং সহ এই দুই ইউনিয়নে খাবার পানির তীব্র সংকট থাকে। ফলে তারা গর্তে খুড়ে পানি জমিয়ে রাখে। এসব ইউনিয়নে পানির সংকট দূরীকরণে গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।১৩। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু রোধে ৫ বছরের শিশুদের সঠিক তত্ত্বাবধান; ৫ বছরের বেশী বয়সীদের সাঁতার শেখানো। ১৪। কর্মব্যস্ত অভিভাবকদের শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার চালুকরণ এবং বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ১৫। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুরোধে গেল বছর সরকার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রালয়ের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখানোসহ নানা কার্যক্রম চালু করলেও কক্সবাজার এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়নি।

যেহেতু আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুদের ভালেভাবে গড়ে তোলতে কিংবা শিশুদের জীবন বাঁচাতে কিংবা দ্বীপে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু রোধে জরুরী ভিত্তিতে সরকারী/বেসরকারীভাবে পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন দ্বীপের সচেতন মহল।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs