প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
কক্সবাজারের রামু উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারে ৩৭তম স্বর্গপূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২১ এপ্রিল) দিনব্যাপী উনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল।
স্বর্গপূরী উৎসবের পৃথক উনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য বৌদ্ধ ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ও নাইক্ষ্যংছড়ি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ঊ-আছাবা মহাথেরো, সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপদেষ্টা, রামু প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের পরিচালক বিজয় রক্ষিত মহাথেরো।
এতে প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন, সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সাবেক মহাসচিব এস লোকজিত মহাথেরো। ধর্মদেশনা করেন, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ আর্যপ্রিয় মহাথেরো, মহেশখালী বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ, বিদর্শন সাধক প্রজ্ঞারত্ন মহাথেরো, বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ও একশফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধমুর্তির প্রতিষ্ঠাতা করুনাশ্রী মহাথেরো, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ শীলপ্রিয় মহাথেরো প্রমুখ ভিক্ষুসংঘ।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারের অধ্যক্ষ শীলমিত্র থেরো। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা টিটু বড়ুয়া ও দয়াল বড়ুয়া।
স্বর্গপুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন উদযাপন পরিষদের দিন ব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে ছিল শুক্রবার ভোরে প্রভাতফেরি সহকারে বুদ্ধ পুজা, সকালে অষ্টপরিস্কারসহ মহাসংঘদান, মহতী ধর্মসভা, ভিক্ষু সংঘের পিন্ডদান, অতিথি ভোজন, দুপুরে স্বর্গপুরী উদ্বোধন, বিকালে স্বর্গপূরী মেলা, ধর্মালোচনা সভা, সন্ধ্যায় স্বর্গপূরী উৎসর্গ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রয়াত ধর্মগুরু প্রজ্ঞামিত্র মহাথেরো এবং প্রয়াত সারমিত্র মহাথরোর নির্বাণ সুখ কামনা ও বাংলাদেশসহ বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা। রাতে অনুষ্ঠিত হয় বৌদ্ধ কীর্তন অনুষ্ঠান।
স্বর্গপূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন উদযাপন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা, প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ শীলমিত্র থেরো জানান- রামুর স্বর্গপুরী উৎসবটি কালের সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ অংশে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষকে মূলত জীবদ্দশায় মানুষ যে কর্ম করে সেই কর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন কুলে তার জন্মান্তর ঘটতে পারে এমন ধারণা দেওয়া হয়। সংসারে মানুষ জন্ম-মৃত্যুর গোলকধাধাঁয় পড়ে ভবচক্রে ঘুরতে ঘুরতে কখনো স্বর্গও লাভ করতে পারে। কিন্তু সেখান থেকেও নির্দিষ্ট একটা সময়ের পরে তাকে চ্যুত হতে হয়। নিজ নিজ কর্মগুণে বা কর্মদোষে মানুষ বিভিন্ন কুলে জন্ম গ্রহণ করছে এমন বৌদ্ধিক ধারণা থেকেই বিগত ৩৭ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু প্রজ্ঞামিত্র মহাথেরো উক্ত স্বর্গপুরী উৎসবের সূচনা করে ছিলেন। সে থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা নববর্ষে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের শুক্রবার এ স্বর্গপূরী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উৎসবে বৌদ্ধদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহনে স্বর্গপূরী উৎসব সম্প্রীতির মহামিলন মেলায় পরিনত হয়।
এদিকে স্বর্গপূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে বিভিন্ন বৌদ্ধপল্লী থেকে দলীয় ভাবে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে নেচে গেয়ে বৌদ্ধ কীর্তন সহকারে।