হ্যাপী করিম,মহেশখালী প্রতিনিধি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বিরাজ করছে। চলছে নির্বাচনি প্রচারণা। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণার মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) বিভিন্ন বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টার, ব্যানার, গণসংযোগ, মিছিল, লিফলেট বিতরণ, আলোচনা ও মতবিনিময় সভাসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে প্রার্থীদের।
বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন তারা। তুলে ধরছেন নির্বাচনি এলাকা নিয়ে নিজেদের নানা পরিকল্পনা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
কক্সবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচনে লড়ছেন ৬ জন প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক-এমপি, বিএনএমের আলহাজ্ব শরীফ বাদশা (নোঙর), ইসলামি ঐক্যজোটে মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস (মিনার), ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি মোহাম্মদ খাইরুল আমিন (একতারা), ন্যাশনাল পিপাল্স পার্টি মোহাম্মদ মাহাবুব আলম (আম) প্রতীক নিয়ে প্রতিদন্দীতা করছেন।
প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় উপজেলায় চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে সর্বত্র চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের মনোনীত প্রার্থীকে খুঁজে নিচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা। নির্বাচনকে সামনে রেখে (বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক ও শরীফ বাদশা’র মধ্যেই জমে উঠেছে আসনটির মাঠের ভোটের আমেজ।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মহেশখালী-কুতুবদিয়া’কে বিএনপির দুর্গ বলা হয়ে থাকে। স্বাধীনতার পর থেকেই ১৯৯১ সালে মোহাম্মদ ইসহাক প্রথম এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ থেকে, জাতীয়সহ স্থানীয় সরকারের প্রায় সবকটি নির্বাচনে এখানে বিএনপি’র জয়জয়কার। স্থানীয়দের মধ্যে প্রবাদ রয়েছে, মহেশখালী-কুতুদিয়া উপজেলার ভোটাররা প্রার্থী নয়, প্রতীকের ভালোবাসায় ভোট প্রদান করে থাকেন। পরে ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ সালে বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে সেই আওয়ামী লীগ টানা দুইবারের সাংসদ ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজে ভবন নির্মান’সহ বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্য খাত এবং মহেশখালীতে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে ঈর্ষনীয় অবস্থানে আওয়ামী লীগ।
উপজেলার সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক (নৌকা) এবং বিএনএম মনোনীত প্রার্থী, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব শরীফ বাদশা’র (নোঙর) মধ্যে।
আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক এমপি’র পিতা এডভোকেট এস এ এম রফিক উল্লাহ’র রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন, তিনি আইনি পেশায় মামলা পরিচালনা করতে নিজে খরচ না নিয়ে মক্কেলদেরকে বাসায় যাওয়ার জন্য উল্টো ভাড়া প্রদান করতেন। তার সেই জনপ্রিয়তার বড় ভূমিকা থাকবে এবার নৌকার ভোটে। একই সঙ্গে তরুণ স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক প্রার্থী হিসেবে তরুণ ও নতুন ভোটারদের আলোচনায় আবারও আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক এমপি’র নামই শোনা যাচ্ছে।
অপরদিকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী, বিএনএম’র মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব শরীফ বাদশা, বড় মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদের টানা দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মহেশখালীতে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। মহেশখালী ও কুতুবদিয়াতে তার নিজস্ব ভোট ব্যাংকও রয়েছে বেশ।
এই দুজনের বাইরে ইসলামি ঐক্যজোটে মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস (মিনার) মার্কার কিছুটা প্রচার প্রচারণা থাকলেও অন্য দলের কোন প্রার্থীদের ভোটের মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫’শ ৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ২’শ ৮৪ জন এবং নারী ভোটার ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ২’শ ৭৮ জন। ১’শ ১৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮২টি মহেশখালী বাকি ৩৭টি কুতুবদিয়া উপজেলায়। মোট ভোটকক্ষ থাকবে ৭’শ ১৮টি। নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি-২০২৪ অনুষ্ঠিত হইবে।