নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন পলাতক থাকার কারণে দীর্ঘদিন ধরে জনগণ সরকারি সেবা ও সুযোগ—সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজে গিয়েও নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পাচ্ছ না নাগরিক সেবা।
ইতোমধ্যে চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। নিয়োগ করেছে প্রশাসক। এরপরও জনগণ সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদের একটি সুত্র থেকে জানা গেছে, কামাল উদ্দিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থাকাকালে তার অনুগত ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের নিয়ে অতি সংগোপনে একটি প্যানেল তৈরি করে স্থানীয় সরকার বিভাগে জমা দেয়। সেই প্যানেল রয়েছেন, আ জ ম সাহাব উদ্দিন, ফিরোজ আহমদ ও বেবি আক্তার।
নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরা অবৈধ প্যানেল সম্পর্কে অবগত হলে তারা ২০২২ সালের ৮ মে জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দেয়।
অভিযোগে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, এম এ কাশেম, নুরুল আজিম কাজল, আলী হোসেন, সাহাব উদ্দিন, সেলিম উল্লাহ বাহার, মোতাহের হোসেন ও মনোয়ারা বেগম।
স্থানীয় সরকারের বিধি মতে পরিষদের প্রথম সভার ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কথা। কিন্তু এই বিধি লঙ্ঘন করে পরবর্তীতে পেছনের তারিখ দেখিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করে রাখে। যদিওবা ওই সময় আইনি জটিলতার কারণে পরিষদে নির্বাচিত ২ জন মেম্বার শপথ নিতে পারেন নি। এরপরও ১০ জন মেম্বারের মধ্যে ৭ জনই চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের অবৈধ প্যানেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, স্বৈরাচারের দোসর ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিনের সাজানো প্যানেলের পক্ষে মোটা অংকের বিনিময়ে কাজ করছে একটি মহল। সাহাব উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে বসাতে তারা ইতোমধ্যে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার মিশনে নেমেছে।
তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভারুয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একটি কমিটি প্রতিবেদকের হাতে আসে। সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এসটিএম রাজা মিয়া স্বাক্ষরিত ৫১ সদস্যের কমিটিতে সাহাব উদ্দিন ত্রান ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এডভোকেট একরামুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার আলম চৌধুরীর স্বাক্ষরিত ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে সাহাব উদ্দিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রাপ্ত।
চিহ্নিত একজন স্বৈরাচারকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আওয়ামী লীগের প্যানেলের পক্ষে যত টাকা বিনিয়োগ করা লাগে তারা সব করবে, এমন তথ্য দেন কয়েকজন ইউপি সদস্য।
স্থানীয় ছাত্রনেতারা জানিয়েছে, জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে সরাসরি মাঠে ভূমিকায় ছিলেন সাহাব উদ্দিন। এর আগে আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির আদেশের খবরে তিনি এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। এমন বিতর্কিত একজন ব্যক্তিকে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এলাকায়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাহাব উদ্দিন মেম্বার বলেন, আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেব লীগের পদ পদবী সম্পর্কে আমি অবগত নই। এসব অপপ্রচার ও মিথ্যাচার। আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সর্বোচ্চ জনসেবা করে যাচ্ছি।
একজন পদবীধারী আওয়ামী লীগ নেতাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, এরকম কোন তথ্য জানা নেই। সার্বিক বিষয় খোঁজখবর নিয়ে করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।