কক্সবাজারের টেকনাফ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা। একদিকে নাফনদী ও অন্যদিকে গাছগাছালিতে ভরা সবুজ -শ্যামল সরকারি বনাঞ্চল। সেই সরকারি বনাঞ্চল এখন অবৈধ দখলদারের কবলে চলে যাচ্ছে। বনের পাছপালা নিধন করে প্রতিনিয়ত একেরপর এক বাড়িঘর তৈরি করে বনের জায়গাতে বসতি গড়ে তুলছে অবৈধ দখলদাররা।
প্রতিনিয়ত অবৈধ দখলদাররা সরকারি বন উজাড় করে বাড়ি-ঘর করে বনাঞ্চল দখল করলেও বনবিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ নিরব রয়েছে।
বলা যায়,সরকারি বন রক্ষায় একেবারে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
এমনকি খোদ রেঞ্জকর্মকর্তার সম্মতিতেই দখলদাররা গাছপালা নিধন করে অবৈধভাবে বনাঞ্চলে বাড়িঘর তৈরি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বনকর্তাকে টাকা দিয়েই এসব ঘর তৈরি করছে বলে জানায় অনেক দখলদার।
টাকা দিলে ঘর করার অনুমতি মেলে, না দিলে সংশ্লিষ্ট বনের দায়িত্বশীলরা অভিযান চালায় বলেও জানান তাঁরা।
তবে রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মিনার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
জানা গেছে,উপজেলার হোয়াইক্যং রেঞ্জের আওতাধীন হোয়াইক্যং বনকর্মকর্তাদের অফিস থেকে বাহারছড়া পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে প্রায় বনের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বাড়িঘর তৈরি করেছে বনখেকোরা। অবৈধ বসতি গড়তে বনাঞ্চলের বড় বড় পাহাড়গুলো কেটে সাবাড় করছে তারা। এমনকি বনের জায়গায় ছাদ জমানো বিল্ডিং ও ইট দিয়ে তৈরি সেমিপাকা শতশত ঘরের অভাব নেই। তবুও রহস্যজনক কারণে বনকর্তারা এসব দেখেও দেখে না ভূমিকায় রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে,হোয়াইক্যং রেঞ্জের আওতাধীন সরকারি বনে ছাদ জমানো বিল্ডিংসহ প্রায় পাঁচশো’র উপরে বাড়ি ঘর করেছে । তাঁদের প্রায়জন বনকর্তাদের ম্যানেজ করেই বনাঞ্চল দখল করে বাড়ি করছে বলে জানা গেছে।
বনবিভাগের জায়গায় পল্লী বিদ্যুতের লাইনও দেওয়া হয়েছে । পল্লী বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত করে অবৈধ দখলদাররা যেন স্বর্গে বসবাস করছে। সবকিছু দেখার পরেও বনবিভাগের দায়িত্বশীলরা নিরব দর্শকের ভূমিকা রয়েছে।
বনে বসতিগড়া বুলবুল আক্তার নামে এক মহিলা বলেন,তাদের ঘর তৈরি করার সময় বনকর্তাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। পরে আবারও টাকা দাবি করে,না দেওয়াতে ঘর ভেঙে দিয়েছে বনকর্তারা। ঘর ভাঙার সময়
বাঁধা দেওয়ায় আসমা আক্তার (১৫) নামে তাঁর এক মেয়েকে মারধর করে ঘরের আসবাবপত্র গুড়িয়ে দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। অবশ্যই পরে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত দিয়েছে। ওই সময় আরও দুইজনের ঝুপড়ি ঘর ভেঙে দেয় বনকর্তারা। বনের জায়গায় শতশত ঘর রয়েছে,তাদের ঘর কেন ভাঙ্গা হচ্ছে না,এমনকি বিল্ডিংঘরগুলোতে বনকর্তারা হাতই দিচ্ছে না। ভাঙলে সবার ঘরগুলো ভেঙে দেবে, না হয় একটাও ভাঙবে না। টাকা না দিলেই ঘর ভাঙে বলে অভিযোগ বুলবুলদের।
অভিযোগ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান,তার একটি দোকান করার সময় ২০ হাজার টাকা নিয়েছে বিটকর্মকর্তা নাছির উদ্দিন ও রেঞ্জার জহির উদ্দিন মিনার। তিনি আরও বলেন,বনের জায়গা দখল করে শতশত ঘর করতেছে,তাঁদেরকে কোথাও বাঁধা দেয় না, ঘর ভেঙে দেয় না, ঘর ভাঙে শুধুমাত্র টাকা না দিলে। বনকর্তাদের টাকা দিলে সব অবৈধ বসতিগুলো বৈধ হয়ে যায় বলে জানান ওই ব্যক্তি।
শুধুমাত্র বুলবুল আক্তাররা নয়,শতশত অবৈধ দখলদাররা একই কায়দায় টাকা দিয়েই বনের জায়গায় বসতি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
তবে টাকার লেনদেন রেঞ্জকর্মকর্তা নিজে না করে দালালের মাধ্যমে করায় বলেও জানান তাঁরা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মিনার বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি,মারধরও করা হয়নি। অবৈধ কোন বিল্ডিং থাকলে সেগুলি তিনি দেখবেন বলেও জানান।
টেকনাফ উপজেলার এসিএফ মনিরুল ইসলাম বলেন,আমার কাছে উনার একটা অভিযোগ আছে, ওইটা তদন্ত করছি এবং আপনারটাও দেখবো। তদন্তে সত্যটা পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।