শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কক্সবাজারের সংকট-সম্ভাবনার কথা বলতে “আওয়াজ”র আত্মপ্রকাশ জুলাই ফাউন্ডেশনের অর্থ আত্মসাত, নাগরিক কমিটির নেত্রী বহিষ্কার। প্রবেশপত্র না পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি উখিয়ার ১৩ শিক্ষার্থী, প্রধান শিক্ষক আটক ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ নেতাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার পাঁয়তারা কক্সবাজার সমুদ্রে যৌথ অভিযানে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ সাত রোহিঙ্গা আটক পূর্বাচল প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি: হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ট্রাম্পের শুল্ক থেকে তিন মাস রেহাই পাবে বাংলাদেশসহ অনেকে, চীনের কাঁধে আরো বোঝা খুটাখালীতে অপহৃত যুবকের মোটরসাইকেল উদ্ধার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে হিজড়া গোষ্ঠীর উৎপাত, ট্যুরিস্ট পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

টেকনাফে রহস্যে ভরা জোবায়ের হত্যা মামলা, তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হল ডিবিকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৫৫ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

২০২৪ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা,তখন ছিল রমজান মাস। কক্সবাজারের টেকনাফের সদর ইউনিয়নে নাজির পাড়া গ্রামের জোবায়ের ও নজুমদ্দিন দুজনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। জোবায়ের ও নজুমদ্দিনের মধ্যে পাওনা টাকা আদায়ের জেরে ঠিক ইফতারের পরেই জোবায়েরকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

কিন্তু পাওনা টাকার বিরোধের জেরে নজুমদ্দিনের নেতৃত্বে বাড়িতে ঢুকে ফিল্মী স্টাইলে জোবায়েরকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরে গুলিবিদ্ধ জোবায়েরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

 

অন্যদিকে ঠিক ওই সময়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও জনপ্রিয় ফুটবলার এনামুল হক তার প্রসূতি স্ত্রী রাশেদা আক্তারকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলেন।

 

দুটি ঘটনা প্রায় একই সময়ে ঘটলেও স্থান ছিল ভিন্ন।  ভিন্ন স্থানে অবস্থান করেও জোবায়ের হত্যা মামলার প্রধান আসামি হন এনামুল। যদিও জোবায়েরকে কারা হত্যা করেছে তার বিবরণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্পষ্টভাবেই তুলে ধরেছেন তার পরিবার। যেখানে এনামুলের সম্পৃক্ততা নেই।

জোবায়ের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিও হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত তার বিবরণ দিয়েছেন আদালতে। সেখানেও এনামুলের নাম ছিল না।

 

হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর ৩১ মার্চ জোবায়েরের মা মাবিয়া খাতুন বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে টেকনাফ থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ‘রহস্যজনক কারণে’ স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হককে প্রধান আসামি করা হয়।

 

জোবায়ের হত্যাকাণ্ডের কোথাও সম্পৃক্ততার চিহ্ন বা প্রমাণ না থাকলেও সেই মামলার প্রধান আসামি হয়ে এখন পলাতক জীবন কাটাচ্ছেন এনামুল। জন্মের প্রথম দিন নিজের একমাত্র সন্তানকে হাসপাতালে দেখার পর আজ পর্যন্ত সন্তানের মুখ দেখেননি তিনি।

এনামুল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মোজাহের মিয়ার ছেলে ও একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

 

তার স্ত্রীর নাম রাশেদা বেগম। ঘটনার দিন জন্ম নেওয়া তাদের একমাত্র সন্তানের নাম মেহেদী হাসান, যার জন্মের দিনই দেখা হয়েছিলেন এনামুল।

সূত্র মতে, ‘মাত্র ৮০০ টাকার জন্য বন্ধুর গুলিতে বন্ধু নিহত’ শিরোনামে জোবায়ের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল। সেই সময় জোবায়েরের মা, ভাই, ভাইয়ের ছেলে ও প্রত্যক্ষদর্শীরা হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত তা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই সব বক্তব্যে এনামের জড়িত থাকার বিষয়টি কেউ উল্লেখ করেনি।

 

তবে ঘটনার পরপরই টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গণির নেতৃত্বে পুলিশি অভিযানে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নজুমদ্দিনের আপন মামাতো ভাই মাসুদ ও মো. হোসেন নামের আরেক যুবককে আটক করা হয়। পরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা। সেই জবানবন্দিতেও এনাম মেম্বারের সম্পৃক্ততার কথা ছিল না।

 

তাদের জবানবন্দিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, ২৯ মার্চ ইফতারের পর মাসুদের হাতে ধারালো অস্ত্র এবং নজুমদ্দিন ও ফিরোজের হাতে দুটি পিস্তল ছিল। এরপর কায়েস হাতে লাঠি দিয়ে বের হন তারা। মাঝপথে যুক্ত হয় হোছনসহ মোট ৫ জন।

 

নথিতে আরো উল্লেখ করা হয়, জুবায়েরের সঙ্গে কায়েসের পূর্বশত্রুতা থাকায় প্রতিশোধ নিতে তাদের গন্তব্য জুবায়েরের বাড়ির দিকে। এরপর ফিরোজ জুবায়েরের বাড়ির সামনে ফাঁকা গুলি ছুড়েন। নজুমদ্দিন, কায়েস, ফিরোজ, হোছন, নিহত জোবায়েরের বাড়িতে ঢুকে বেরিয়ে এসে নজুমদ্দিন বলেন ‘জোবায়েরকে শেষ করে দিয়েছি’। মো. হোছনও আদালতে ১৬৪ জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডে কতজন জড়িত ছিল স্বীকার করেন। নজুমদ্দিনের গুলিতে নিহত হয়েছে মর্মে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তারা।

 

সংশ্লিষ্টদের দাবি, আলোচিত জোবায়ের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত কারা তা গ্রেপ্তার দুই আসামির জবানবন্দিতে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ উঠে এলেও ‘রহস্যজনক’ ও ‘উদ্দেশ্যমূলক’ কারণে এনামুলকে আসামি করা হয়েছে।

 

এনামুল মোবাইল ফোনে জানান, একই এলাকার সিদ্দিক আহমদ ওরফে হাতকাটা সিদ্দিকের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তার পরিবারের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। ওই সিদ্দিক আহমদ ও তার লোকজনের হাতে ২০১৫ সালে নির্মমভাবে খুন হন এনামুলের আপন ভাই আজিজুল হক মার্কিন। সেই ঘটনার জেরে দুই পরিবারের মাঝে বিরোধ চলছে। কোনো মামলা হলেই আসামি হন এনামুল ও তার পরিবারের সদস্যরা।

 

স্থানীয় নাজির পাড়ার প্রবীণ আবুল কাসেম বলেন, নজুমদ্দিনের গুলিতে নিহত জোবায়েরের মা মাবিয়া খাতুন ও সিদ্দিক আহমদ আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন। ধারণা করা হচ্ছে, জোবায়ের হত্যাকাণ্ডের পর ওই সিদ্দিক আহমদই ফুফাতো বোন মাবিয়া খাতুনকে ম্যানেজ করে এনামুলকে সেই হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করিয়েছেন।

 

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গণির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল ছিদ্দিক আহমদের। ওসি উসমান গণিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নিহত জোবায়েরের মা মাবিয়া খাতুনকে রাজি করিয়ে এনাম মেম্বারসহ আরো দুইজন নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি করিয়েছেন সিদ্দিক আহমদ।

 

টেকনাফ নাজির পাড়ার দারুল কোরআন মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ জসিম উদ্দিন মনে করেন, জোবায়ের যদি বেঁচে থাকতেন, হয়ত এনাম মেম্বারসহ নিরপরাধ কাউকে কোনদিনই আসামি করা হতো না। তা ছাড়া জোবায়ের ছিলেন একজন ভালো ফুটবলার। একইভাবে এনামুলও একজন ভালো ফুটবলার। বড় ভাই-ছোট ভাই হিসেবে তাদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক ছিল।

 

সূত্র মতে, দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে ছিল টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মামলাটির তদন্তভার পেয়েছে কক্সবাজার পুলিশ সুপারের অধীনে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।

 

এলাকাবাসি প্রত্যাশা, এবার বন্ধুর গুলিতে নিহত জোবায়ের সঠিক বিচার পাবেন এবং হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হবে।

 

জোবায়ের হত্যা মামলার প্রধান আসামি এনামুল মামলাটির অধিকতর তদন্তের স্বার্থে পুলিশপ্রধান মহাপরিদর্শক (আইজি), চট্টগ্রাম পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছেন।

 

সূত্র মতে, ডিআইজি ওই মামলায় আটক দুই আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি, পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে মামলাটি কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তরের নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

মামলার বাদী মাবিয়া খাতুন দাবী করছেন, ‘এনাম মেম্বারই আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছেন। আমি নিজের চোখে দেখেছি। জোবায়ের মানুষের সঙ্গে মিশতেন। এলাকায় সবাই তাকে পছন্দ করতো। সেই কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি মামলাটির তদন্তভার পেয়েছেন। নিজেই মামলাটি তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ওখানে সাতজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আপাতত এটুকুই মামলার তদন্তের অগ্রগতি।

অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে তৃতীয় একটি পক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs