রিয়াজ উদ্দিন:
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার ৫নং বাহারছড়া ইউনিয়নের মৃত জকরিয়ার মেয়ে আলমাছ খাতুন পিতার ওয়ারিশমূলে সম্পত্তি পেলেও ভোগ দখল করতে দিচ্ছে না তার আপন ভাই আব্দুল মাবুদ। বিভিন্ন খতিয়ান থেকে পৈত্রিক সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার থাকলেও অন্যায়ভাবে ভোগ দখলে রাখা এবং তার বোনকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাই আব্দুল মাবুদ তার সাত বোনের ছয়বোন ফরিদা খাতুন, মেহের খাতুন, শামসুন নাহার, নুরুন নাহার, সাবেকুন নাহার, ছলেমা বেগম পিতার ওয়ারিশী সম্পত্তির ভাগ দিলেও বঞ্চিত করে আলমাছ খাতুনকে।
এবিষয়ে মৃত জকরিয়ার মেয়ে আলমাছ খাতুন পিতার সম্পত্তি পাওয়ার অধিকারের দাবিতে স্থানীয় সরকার আদালত ৫নং বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিলেও তার ভাই আব্দুল মাবুদ কোন সদোত্তর দিতে না পেরে স্থানীয় আদালতের দেওয়া রায়ের দ্বিমত পোষণ করে।
ভুক্তভোগীর ছেলে আবদুল করিম বলেন, মায়ের মিরাজী সম্পত্তি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পাওয়ার অধিকার থাকলেও আমার আপন মামা আব্দুল মাবুদ জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে একাই ভোগ দখল করে রাখে। এ বিষয়ে ৫নং বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিলে পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্য সালিশে সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আমাদের পক্ষে রায় দিলেও সেটি মানতে রাজি নন আব্দুল মাবুদ। পরে টেকনাফ থানায় অভিযোগ করলেও সেখানেও তিনি হাজির হননি। পরে চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ এলাকবাসীর সহায়তায় গেল আড়াই মাস আগে উক্ত মায়ের মিরাজী জমিতে চারিদিকে বেড়াজালে আবদ্ধ করে একটি ঘর স্থাপন করে বসবাস করে আসছি। গেল বুধবার রাতে আব্দুল মাবুদ ৮—১০জন ভাড়া করা সন্ত্রাসী নিয়ে আমি ও আমার স্ত্রী সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্ঠা চালায়। তারা যখন বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে দিলো, তখন আমি বের হলে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা রাম দা, ক্রিস, লাঠি দিয়ে আমার উপর বর্বর হামলা চালায়। পরে আমার চিৎকার শোনে আমার স্ত্রী বের হলে, তাকেও ক্রিস দিয়ে হাতে গায়েসহ পুরো শরীরে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে আমরা ৯৯৯ এ ফোন করে টেকনাফ থানাকে বিষয়টি অবগত করলে তারা চিকিৎসা সেবা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে।
তিনি আরো জানান, চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এলে আব্দুল মাবুদ ও তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আমার তৈরিকৃত বাড়িটি ভেঙ্গে চুরমার করে উচ্ছেদ করে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়। এবিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান—মেম্বারসহ এলাকাবাসীরাও অবগত আছেন।
ভুক্তভোগীর ছেলে আবদুল করিম স্ত্রী বলেন , তারা মূলত আমাদেরকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে এসেছিল। কারণ তারা আমাদেরকে মেরে ফেললে কথা বলার মত মানুষ থাকবে না এবং সম্পত্তি একাই ভোগ করতে পারবে। আমাকে ক্রিস দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে এবং হত্যার চেষ্ঠা করে। প্রশাসনের কাছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
উক্ত বিষয়ে ৫নং বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন জানান, ভুক্তভোগী আলমাছ খাতুন পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি জোর পূর্বক তার আপন ভাই আব্দুল মাবুদ জোর পূর্বক দখলে রাখার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ পাই।
বিবাদীকে বাদীর প্রাপ্ত ওয়ারিশী সম্পত্তির ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ফরায়েজ করে বাদীর অংশ বাদীকে বুঝিয়ে দিতে বলা হইলে বিবাদী বাদীকে উক্ত জমি দিবে না মর্মে অস্বীকৃতি জানান। বিচার খানার গ্রাম আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় এবং বিবাদী বিচার মানে না বিধায় সমাধান দেওয়া সম্ভব হয় নাই। বিবাদী একজন পরধন লোভী লোক।
এমতাবস্থায় বাদীর বাদীর পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি বিবাদীর দখল হইতে উদ্ধার করে নেওয়ার স্বার্থে বাদীকে সরাসরি উচ্চতর আইন বা আদালতে আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিবাদীর বিরুদ্ধে গত ০৮/১২/২০২৩ইং তারিখ বাদীর পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি জোর পূর্বক দখলে রাখার বিষয়ে ৫নং বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বিচার দায়ের করিলে বিচার খানা গ্রহণ করত: বিচার সমাধানের স্বার্থে ১৪/১২/২০২৩ইং তারিখ বিচারের দিন ধার্য্য করা হয়। ধায্যর্ তারিখ বাদী বিচারে হাজির হয়। বিবাদী বিনা তদবীরে বিচারে গর হাজির থাকেন। বিবাদীবে বিচারে হাজির হওয়ার জন্য ২১/১২/২০২৩ইং তারিখ নোটিশ দেওয়া হয়। ধায্যর্ তারিখ বাদী ও বিবাদী বিচারে হাজির হয়। ব্যদী ও বিবাদী বিচারে হাজির হইলে প্রথমে বাদীর জবানবন্ধি শুনা হয়। বাদীর জবানবন্ধিতে পাওয়া যায় যে, বাদীর পিতা বিগত ৪০ (চল্লিশ) বছর পূর্বে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যু পর রেখে যাওয়া পৈত্রিক ওয়ারিশী সম্পতির ভাগ না দিয়ে বিবাদী ভোগ দখল করে রাখেন মর্মে বাদীর জবানবন্ধি ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পাওয়া যায়। বিবাদীর আব্দুল মাবুদের জবানবন্ধিতে উক্ত জমির বিষয়ে কোন সদোত্তর দিতে পারে নাই। বিবাদীকে বাদীর প্রাপ্ত ওয়ারিশী সম্পত্তির ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ফরায়েজ করে বাদীর অংশ বাদীকে বুঝিয়ে দিতে বলা হইলে বিবাদী বাদীকে উক্ত জমি দিবে না মর্মে অস্বীকৃতি জানান। বিচার খানার গ্রাম আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় এবং বিবাদী বিচার মানে না বিধায় সমাধান দেওয়া সম্ভব হয় নাই। বিবাদী একজন পরধন লোভী লোক।
এমতাবস্থায় বাদীর বাদীর পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি বিবাদীর দখল হইতে উদ্ধার করে নেওয়ার স্বার্থে বাদীকে সরাসরি উচ্চতর আইন বা আদালতে আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই বিষয়ে স্থানীয় ৪নং ওয়ার্ড মেম্বারও একই মত পোষণ করে বলেন, আব্দুল মাবুদ তার বোনের ওয়ারিশী সম্পত্তি নিজেই ভোগ দখলের জন্য মূলত তার ভাগিনা আবদুল করিম ও তার পরিবারের উপর হামলা চালায়। তাকে লোভের বেড়াজালে আবদ্ধ করায় সে লোভ সামলাতে না পেরে এই রকম জঘন্য কুকর্মে লিপ্ত হয়েছে। আমি সহ আমার ইউনিয়ন পরিষদ এর সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে অভিযুক্ত আব্দুল মাবুদের বক্তব্য নিতে ফোনে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।