দেশী প্রজাতির বৃক্ষরোপণে প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য ফিরে পাবে ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন নারকাটা পাহাড়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে সুফল প্রকল্পের নামে টেকসই বনায়ন জীবিকায়ন প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।

শনিবার, ২৭ শে মে, দুপুরে ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন মুদিরছড়া বিটের নারকাটা পাহাড়ে বৃক্ষরোপণের শুভ উদ্বোধন করবেন..মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক। এসময় উপস্থিত ছিলেন. চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাস, উপকূলীয় বন বিভাগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান, দক্ষিণ বন বিভাগ কর্মকর্তা সরওয়ার আলম, মহেশখালী-কুতুবদিয়া এসপি সার্কেল রামপ্রসাদ ভক্ত, মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রণব চৌধুরী, বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা খান জুলফিকার আলী,
ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়ানুল ইসলাম মঈন, মহেশখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবুল বশর পারভেজ, বন বিভাগের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও উপকার ভোগী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জনা যায়, এক সময় এ ছোট মহেশখালী পাহাড়ে দেখা যেতো বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখির অভয়ারণ্য। শোনা যেতো পশু পাখির কোলাহল। কিন্তু নির্বিচারে বৃক্ষ লুটপাটের কারনে কালের আবর্তে উজাড় হয়ে গেছে বন। ফলে নারকাটা পাহাড়ের এসব প্রাণি ও জীববৈচিত্র বিলুপ্তি হয়ে গেছে। এখন আর নারকাটা পাহাড়ে চোখে পরে না পশু পাখির অভয়ারণ্য। শোনা যায় না মধুর সুরের পশু পাখির কোলাহল। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে যে পরিমাণে বন থাকার কথা সে পরিমাণে বন নেই নারকাটা পাহাড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গত ৯০ দশকেও নারকাটা পাহাড়ে শালগজারিসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ছিল। ছিল নানান রঙ বেরঙের পশু পাখির অভয়ারণ্য। কিন্তু দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষ ধ্বংস করে নারকাটা পাহাড়ে গড়ে তোলা হয় সামাজিক বনায়ন। বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিদেশী এ উডলট বাগানের গাছে বসতে দেখা যায় না কোন পশু পাখি। ফলে নারকাটা পাহাড়ের পশু পাখির অভয়ারণ্য দিনে দিনে বিলুপ্তি হয়ে যায়। শুধু তাই নয় এসব উডলট বাগান প্রচুর পরিমানে পানি শোষণ করায় নারকাটা পাহাড়ের ভূগভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। এতে নারকাটা পাহাড়ে দেখা দিয়েছে প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব। শীত মৌসুমে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি ও গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড তাপ মাত্রায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাণবৈচিত্র্য বিলুপ্তি হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের লক্ষে আ-লীগ সরকার নারকাটা পাহাড়ে দেশী প্রজাতির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেয়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থে সুফল প্রকল্পের নামে টেকসই বনায়ন জীবিকায়ন প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।৷

জানা গেছে, ২০২২/২৩ অর্থ বছরে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নে ফরেষ্ট রেঞ্জ এলাকা মুদিরছড়া বিটে প্রায় ১শ ৫০ হেক্টর বনের জমিতে রোপণ করা হয়েছে দেশীয় প্রজাতির গাছের চারা। দেশী প্রজাতির কাজু বাদাম, বহেড়া, চাপালিশ, কানাইডিঙ্গি, সোনালু, জাম্বুরা, তেলসুর, গামার, বাটনা, ঢাকী জাম, ক্ষুদিজাম, গাব, তেতুল, চিকরাশি, জলপাই, লাল চন্দন, নিম, জামরুল, ডেওয়া, অর্জুন, নাগেশ্বর, গর্জন সহ বিভিন্ন ৫০ প্রজাতির চারা প্রতি হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয়, ২৩ লক্ষ ৭৫ হাজার চারা। ইতিমধ্যেই চারাগুলো রোপণ শুরু করেছে। ফিরে পাবে নারকাটা পাহাড়ের আদিচিত্র।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, সুফল টেকসই বনায়ন জীবিকায়ন বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্য হচ্ছে বনের বৃক্ষ আর নিধন হবে না। বৃক্ষের ফলগুলো এলাকাবাসী ও বনের পশু পাখির খাদ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এতে মুদিরছড়া পাহাড়ে আবার ও জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। ফিরে আসবে ছোট মহেশখালী পাহাড়ের সৌন্দর্য্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য। তিনি আরও বলেন, গাছ বড় হবার পর তা নিলামে বিক্রি করা হবে। কিন্তু কোন গাছ কাটা হবে না। ধন্য দেশগুলো জলবায়ু তহবিলের অর্থে তা নিলামে ক্রয় করবে। মেয়াদোত্তীর্ণ হবার পর আবারও নিলামে বিক্রি করা হবে। এভাবে এসব বৃক্ষ থেকে প্রতিবছর রাজস্ব ক্ষাতে বিপুল পরিমাণের অর্থ।