প্রেস বিজ্ঞপ্তি
৭০০ একর বনভূমির ইজারা বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে
আজ বুধবার বিকাল ৪ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জেলাব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক ভাবে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু হয়।
এসময় নেতৃবৃন্দরা বলেন,কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের পাশে শুকনাছড়ির প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ও রক্ষিত ৭০০ একর পাহাড়ি বনভূমিতে প্রশিক্ষণ একাডেমি চাই না। চাই বনাঞ্চলে ঝুঁকিতে থাকা হাতিসহ বন্য প্রাণীর সুরক্ষা। গত তিন বছরে কক্সবাজারের বনাঞ্চলে মারা গেছে ১৭টি বন্য হাতি। ১১ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়শিবির তৈরিসহ সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা তৈরির বিপরীতে উজাড় হয়েছে আরও ১২ হাজার একরের বেশি বনাঞ্চল। এতে শতাধিক বন্য হাতির অভয়ারণ্য উজাড়, খাদ্য ও খাওয়ার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে বন্য প্রাণী। এমন পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণ একাডেমির বিপরীতে আরও ৭০০ একর বনাঞ্চল উজাড় হলে বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব থাকবে না। তাই প্রশিক্ষণ একাডেমির বিপরীতে বরাদ্দ ৭০০ একর বনভূমির ইজারা বাতিলের দাবিতে আমরা মাঠে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব। বাপার ধারাবাহিক কর্মসূচি অংশ হিসেবে জেলাব্যাপী গণস্বাক্ষর আদায় করে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠানো হবে বলে জানান। তাই দেশপ্রেমিক সর্বস্তরের মানুষের গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে বনভূমি বন্দোবস্ত বাতিলের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। উক্ত কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বাপা জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী। এসময় বাপা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, ‘১০০-৩০০ সরকারি কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের জন্য ৭০০ একর জমির দরকার কেন হবে? তারপরও প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনের দরকার হলে জেলায় বহু সমতল ভূমি রয়েছে, সেখানে প্রশিক্ষণ একাডেমি তৈরি করলে আমাদের কারও আপত্তি নেই। কিন্তু বনাঞ্চল উজাড় করে কাউকে প্রশিক্ষণ একাডেমি করতে দেওয়া হবে না।’
বাপা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, পর্যটন শহরের দ্রুত উন্নয়ন ঘটছে বলে সবার নজর পড়েছে সমুদ্রসৈকত এলাকার দিকে। প্রাকৃতিক দৃশ্য, পাহাড়, ঝরনা, বন্য প্রাণীর দৌড়ঝাঁপ দেখতে মানুষ কক্সবাজারে ছুটে এলেও যারা পাহাড় প্রকৃতি রক্ষা করার দায়িত্বে সেসব সরকারি আমলারাই এখন পাহাড় প্রকৃতি ধ্বংসের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। কক্সবাজারের ২৫ লাখ মানুষ ৭০০ একর বনভূমিতে প্রশিক্ষণ একাডেমি চান না। এসময় জেলা বিভিন্ন উপজেলার সভাপতি /সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন, জেলা কমিটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি ফজলুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম, যুগ্ম সম্পাদক এম জসিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক দোলন ধর, সদস্য আসাদুজ্জামান সামেম, সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি মোঃ এনামুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শেখ সেলিম, জাহাঙ্গীর আলম শামস, এস এম ছৈয়দুল্লাহ আজাদ পৌর কমিটির সভাপতি কফিল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ইরফানুল হাসান , সাংগঠনিক সম্পাদক উছেন থোয়েন, ঈদগাহ উপজেলার সভাপতি সাংবাদিক রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক, চকরিয়া উপজেলা কমিটির সভাপতি সাইদুল করিম, সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম মোরশেদ, মহেশখালী উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আবু বক্কর, মওলানা ছৈয়দ কাদের, পেকুয়া উপজেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল ইসলাম বাবুল, কুতুবদিয়া উপজেলা সভাপতি এম শহিদুল ইসলাম, সহ সভাপতি আমিনুল হক প্রমূখ
উল্লেখ্য, মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশের ওই বনভূমি রক্ষিত ও পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। জমি বন বিভাগের হলেও বরাদ্দ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ৭০০ একরের ওই বনভূমি ধ্বংস করে সেখানে বঙ্গবন্ধু সিভিল সার্ভিস একাডেমি (বিএপিএ) ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) নিজস্ব ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। বাপার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ঝিলংজা বনভূমিকে ‘রক্ষিত বনভূমি’ বলে ঘোষণা করার পর থেকে বন বিভাগ এটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। ২০০১ সালে দেশের বনভূমির যে তালিকা করা হয়, তাতেও ঝিলংজা মৌজা বনভূমি হিসেবে চিহ্নিত আছে। এই বনভূমির বরাদ্দ দেওয়া জমির ৪০০ একর পাহাড় ও ৩০০ একর ছড়া বা ঝরনা। সেখানে অনেক দুর্লভ প্রজাতিসহ ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এ ছাড়া বন্য প্রাণীর মধ্যে আছে এশীয় বন্য হাতি, বানর, বন্য শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি। এ কারণে বন বিভাগ থেকে ‘এই ভূমি বন্দোবস্তযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে বন বিভাগের আওতাধীন এই ভূমি বেআইনিভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ইজারা দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।