এম, শহীদুল ইসলাম,কুতুবদিয়া,কক্সবাজার:
বয়স এখন প্রায় ৭৫ ছুঁই ছুঁই। বয়সের ভারে শরীর কিছুটা নুয়ে পড়লেও মানসিকভাবে নুয়ে পড়েনি কখনো। তিনি প্রতিদিন যত্ন নিয়ে তৈরি করেন বাঁশ ও বেতের নিত্যপণ্য। যা গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য হস্তশিল্প। ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকেই এসব নিত্যপণ্য তৈরির কাজ শিখেছেন। এটিকে নিজের পেশা হিসেবে গ্রহন করে ৫০ বছর পার করেছেন। এত অল্প উপার্জনে জীবন সংগ্রামের মাঝে উমরাহ হজ্বও সম্পাদন করেন। তার দাম্পত্য জীবনে ৬ পুত্র এবং ৫ কন্যা থাকলেও এই বৃদ্ধ বয়সে কেউ মানুষটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়নি। এতে তার দুঃখ নেই। মাসিক মাত্র হাজার তিনেক টাকার আয়ে তার সংসার ভালোই চলছে। এত আর্থিক টানা- পোড়নের পরও সবচেয়ে খুশি এলাকাবাসী তাকে “আলহামদুলিল্লাহ” নামে চিনেন। এতক্ষণ যার জীবন সংগ্রামের কথা বলেছি তিনি কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কাহার পাড়া এলাকার বাসিন্দা বদিউল আলম প্রকাশ ওরফে “আলহামদুলিল্লাহ”।
স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন, রহিম উল্লাহ সহ অনেকেই বলেন,তার মূল নাম বদিউল আলম হলেও এ নামে কাউকে চিনেন না। তবে, আলহামদুলিল্লাহ বললেই সব বয়সের মানুষ তাকে চিনবেন। তার পরিশ্রমে সংসার জীবনে উমরাহ হজ্বও পালন করেছেন। তিনি সৎ হওয়ার কারণে ক্ষুদ্র আয়েও সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যের কাজটি করতে পেরেছেন। আর সব সময় “আলহামদুলিল্লাহ” শব্দটি ব্যবহার করেন বলেই তাকে “আলহামদুলিল্লাহ” নামে ডাকেন স্থানীয়রা।
এদিকে, বাঁশ ও বেতের এমন কোনো পণ্য নেই যা তৈরি করতে পারে না। স্থানীয় বাজার থেকে বাঁশ ও বেত কিনে এ গুলোকে হস্তশিল্পে তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বেচে।
এই হস্তশিল্পের মাধ্যমে নানান কিছু তৈরি ও বিক্রি করে প্রতিমাসে তার কয়েক হাজার টাকা আয় হয়। এতেই কোন মতে চলে কষ্টের সংসার । তবে, সরকারি ভাবে সহায়তা পাওয়া গেলে এই হস্তশিল্পকে আরো সম্প্রসারণ করা সম্ভব হতো বলে দৈনিক রূপালী সৈকতকে জানান বদিউল আলম প্রকাশ ওরফে আলহামদুলিল্লাহ। তিনি জানান, তার পরিবার হস্তশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সরকারি পৃষ্ঠপোষক, পুঁজির অভাব এবং বেতের তৈরি চট, মোড়া, ঝুড়ি, টুকরি, খাঁচা, চালুন, জায়নামাজ প্রভৃতি এসব পণ্যে ব্যবহারেও তার তৈরি বাঁশ ও বেতের পণ্যের গুণগত মান দ্বীপ জুড়ে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র কুতুবদিয়ার আহবায়ক এম. শহীদুল ইসলাম বলেন, গ্রাম বাংলার সুপরিচিত হস্তশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের ব্যবহার কমে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের পণ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। নিত্যপণ্যের ব্যবহারে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারের উপর চাপ কমাতে বদিউল আলমের মতো হস্তশিল্প কর্মটি বিরল দৃষ্টান্ত। পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই হস্তশিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই বদিউল আলমের মতো হস্তশিল্পে এখনো যারা এ পেশায় আছে তাদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে প্লাস্টিক পণ্য বন্ধ করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব হতে পারে।