বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মহেশখালীতে নবাগত ইউএনও সাথে সাংবাদিকদের সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় কক্সবাজার পৌর, সদর ও রামু উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন মহেশখালীতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ চকরিয়ায় হাইব্রীড ধান ও উফশী সার পেয়ে খুশিতে উৎফুল্ল উপকারভোগী কৃষকেরা চকরিয়ায় উপজেলা কৃষকদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এখন কক্সবাজারে। নাফ নদে সতর্কতা জারি করে মাইকিং মহেশখালীতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন  জয় কারাতে একাডেমির কমিটি সংস্কার: দায়িত্বে মুকুল, আবছার, জয়দেব শীর্ষ ৬ দালালের নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজারের পতিতা ব্যবসা

২১ বছর পর মায়ের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ অনাথ শিশুকে বুঝিয়ে দিলেন ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪
  • ১২৩ বার পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদক:
মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ, এখন ২৪ বছরের এক টগবগে যুবক। এই যুবকের বয়স যখন মাত্র ৩ বছর তখন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চাকমারকুল কলঘর বাজার এলাকায় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় মা হাসিনা বেগম ও তার নাম না জানা শিশু বড় ভাই। অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায় কেবল শিশু কলিম উল্লাহ। ঠিক ওই সময় সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখনকার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান। আত্মীয়-পরিজনের খোঁজ না পেয়ে চাকমারকুলের বিএনপি নেতা ও বর্তমানে চাকমারকুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুফিদুল আলমের সহায়তায় মৃত মা-ছেলেকে দাফন ও বেঁচে যাওয়া কলিম উল্লাহকে চট্টগ্রামের একটি শিশু সদনে রাখার ব্যবস্থা করে দেন। আর গাড়ির মালিকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করেন এমপি সহিদুজ্জামান। কিন্তু বেঁচে যাওয়া শিশুটির আত্মীয়-পরিজনের খোঁজ না পেয়ে নিজের নামেই সোনালী ব্যাংকের রামু শাখায় এফডিআর করে রাখেন।

মাঝখানে কেটে যায় ২১ বছর। সহিদুজ্জামানও ভুলে যান সেই শিশুটির কথা। মনেও ছিল না তার জন্য এফডিআর করে রাখা সেই ২০ হাজার টাকার কথাও। চলতি ২০২৪ সালের শুরুর দিকে কাগজপত্র নাড়াচাড়া করতে গিয়ে হঠাৎ সামনে আসে এফডিআরের সেই কাগজপত্র। মনে পড়ে যায় সেই মর্মান্তিক দূর্ঘটনার কথা। মনে পড়ে যায় শিশু সদনে রাখা সেই শিশুটির কথা।

এবার ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান খোঁজ করতে থাকেন সেই শিশুটির। খোঁজ নেয়া হয় চট্টগ্রামের সেই শিশু সদনে। তারা জানায়, শিশু কলিম উল্লাহকে পটিয়ায় আরেকটি শিশু সদনে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে খোঁজ নেয়া হয়। এবার জানা যায়, অনাথ শিশু কলিম উল্লাহকে সেই শিশু সদন থেকে বহু আগেই বিদায় দেয়া হয়েছে।

এবার খোঁজ লাগানো হয়, রামুর রাজারকুল ইউনিয়নে। যেখানে ছিল সেই শিশুটির নানার বাড়ি। আবারও ফিরে আসেন সাবেক চেয়ারম্যান মুফিদুল আলম। তিনি খোঁজখবর নিয়ে বের করে আনেন শিশু কলিম উল্লাহর এক মামাকে। যে মামার সাথে শিশু সদনে দেয়ার ৬ বছর পর ভাগিনা কলিম উল্লাহর যোগাযোগ হয়। তিনি জানান, শিশু কলিম উল্লাহ আর শিশু নেই। সে এখন ২৪ বছরের এক টগবগে যুবক। এক্সিডেন্টে মা ও ভাইকে হারানো শিশু কলিম উল্লাহ কখনও তার বাবা নাছির আহমদের খোঁজ পাননি। শিশু সদন থেকে নিকটাত্মীয়দের খোঁজ পাওয়ার আগেই তার বাবার মৃত্যু হয়েছে। পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ কলিম উল্লাহ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারলেও বর্তমানে কক্সবাজার শহরের অভিজাত হোটেল উইন্ডি টেরেস-এ কাজ করছেন।

যুবক কলিম উল্লাহ কখনও এমপি সহিদুজ্জামানের নাম শুনেননি। তার মা-ভাইয়ের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের টাকা রয়েছে সহিদুজ্জামানের কাছে সে কথাও কখনও কারো কাছে জানতে পারেননি। অন্যদিকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন এই জনপদের নন্দিত জননেতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান। তাঁর কাছে রয়ে গেছে অনাথ এক শিশুর আমানত! সে টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। যে কোন ভাবেই তাকে খোঁজে পেতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে সেই টাকা। আত্মীয়-পরিজনহীন যে শিশুটিকে সরকারি শিশু সদনে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন সেই শিশুটিরইবা কী অবস্থা, জানতে মন আকুলি-বিকুলি করছে। তিনি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুফিদুল আলম ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারি নুরুল আবছার সুমনের সহায়তা নিয়ে খোঁজে বের করেন আজকের তরতাজা তরুণ কলিম উল্লাহকে। যোগাযোগ করেন সোনালী ব্যাংকের রামু শাখায়। অবশেষে দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। ১৩ মে, সোমবার সকালে ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামানের নামে এফডিআর করে রাখা সেই টাকা তুলে দেয়া হবে অনাথ যুবক কলিম উল্লাহর হাতে।

ঠিক হলো দিন, ঠিক হলো সময়ও। ১৩ মে বেলা ১১টায় রামুর সোনালী ব্যাংকে হাজির হন সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান। আগেই ব্যাংকে হাজির হয়েছেন চাকমারকুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুফিদুল আলম আর নিজের মামাকে নিয়ে হাজির অনাথ যুবক কলিম উল্লাহ। সেখানে তৈরি হয় আবেগঘন এক মুহুর্ত। কলিম উল্লাহকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এমপি সহিদুজ্জামান। কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন সাবেক চেয়ারম্যান মুফিদ। এ যেন নিজের সন্তানকে বহু বছর পর ফিরে পাওয়ার মতো আবেগঘন আনন্দময় এক মুহুর্ত!

ব্যাংকে রাখা ২০ হাজার টাকা ২১ বছর পর ব্যাংকের সব ফি বাদ দিয়ে পাওয়া গেছে ৬২ হাজার টাকারও কিছু বেশি। মা-ভাইয়ের মৃত্যুর সেই ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে অনাথ কলিম উল্লাহ কিনতে চান একটি বসতভিটা। সাবেক এমপি সহিদুজ্জামান সেই ৬২ হাজারের সাথে নিজের একাউন্ট থেকে যোগ করেন আরও ১৮ হাজার টাকা। পুরো ৮০ হাজার টাকা তুলে দেন যুবক কলিম উল্লাহর হাতে।

কী ঘটেছিল সেদিন
এখন থেকে প্রায় ২১ বছর আগে রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের গরীব ঘরের তরুণী হাসিনা বেগম সংসারের খোঁজখবর না নেয়া স্বামী মহেশখালীর নাছির আহমদকে খুঁজতে বের হয়েছিলেন। স্বামীকে খোঁজে না পেয়ে ফিরে আসেন চাকমারকুলের কলঘর বাজারে। রাস্তা পার হয়ে রাজারকুলে বাবার বাড়িতে ফিরছিলেন হাসিনা। কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুত গতির গাড়ি হাসিনা ও তার দুই ছেলেকে চাপা দেয়। ওই সময় মায়ের কোলে ছিল ৩ বছর বয়সী আজকের কলিম উল্লাহ আর হাতে ধরা ছিল কলিম উল্লাহর চেয়ে কয়েক বছরের বড় তার ভাই। গাড়ির চাপায় মুহুর্তেই পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় হাসিনা ও তার বড় ছেলে। গাড়ির নিচে চাপা পড়েও অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায় ছোট্ট শিশু কলিম উল্লাহ।

সেদিন ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনা দেখে খোঁজ নেন তৎকালিন কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান। নিহতদের কোন নিকটাত্মীয়ের খোঁজ না পেয়ে বেঁচে যাওয়া শিশুকে কক্সবাজারের সরকারি শিশু সদনে দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় কোন শিশু সদনই তাকে রাখতে রাজি হয়নি। পরে চট্টগ্রামের একটি শিশু সদনে তাকে রাখার ব্যবস্থা করেন এমপি সহিদুজ্জামান। আর দূর্ঘটনাকারি গাড়ির মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবৎ আদায় করা হয় ২০ হাজার টাকা। শিশুটির খোঁজ নিতে কোন আত্মীয়-পরিজন না আসায় সেই টাকা নিজের নামে সোনালী ব্যাংকের রামু শাখায় এফডিআর করে রাখেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর সেই টাকা বেঁচে যাওয়া অনাথ শিশু কলিম উল্লাহর হাতে তুলে দেন এমপি সহিদুজ্জামান নিজেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs