সদর প্রতিনিধি:
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের সমাজের মূলস্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো নিরলসভাবে কাজ করছে। এর সুফলও মিলছে। হিজড়া জনগোষ্ঠি সমাজের বোঝা নয়, সবার সহযোগিতা-সহমর্মিতা পেলেই তারা এগিয়ে যাবে। তারাও সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। তারা আমাদের মতো সবক্ষেত্রে সমান মর্যাদা, সমান অধিকার ভোগ করবে। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সব গুণ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠায় না। এজন্য বিশেষ বৈশিষ্ঠ্যের জন্য কোন মানুষের অহংকার করা উ”িত নয়। বিকশিত যুব মানব কল্যাণ সংগঠন রামু’র উদ্যোগে ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের অধিকার রক্ষার জন্য’ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের সাথে প্রকল্প পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বৃহষ্পতিবার, ৬ জুন সকাল ১১ টায় কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের হিরন্ময় সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- বিকশিত যুব মানব কল্যাণ সংগঠন রামু’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সভায় প্রকল্প পরিচিতি, প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন, বিকশিত যুব মানব কল্যাণ সংগঠন রামু উপজেলা সমন্বয়কারী উজ্জ্বল বড়ুয়া। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মছিউর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. হাবিবুর রহমান, সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. কৌশিক খান, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আশীষ চন্দ্র পাল, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রোগ্রাম স্পেশালিষ্ট মো. নাজমুল হক, রামু প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ, ইপসার প্রতিনিধি মো. রাশেদ, ব্লাস্ট এর প্রতিনিধি হাসান শহীদ আজাদী প্রমূখ। শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- বিকশিত যুব মানব কল্যাণ সংগঠনের সাবেক সভাপতি আবুল মনসুর। সভায় হিজড়া জনগোষ্ঠির নেতৃবৃন্দ তাদের নানান সমস্যা তুলে ধরে বলেন, এখন তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন থাকলেও তারা ভোটার আইডি থেকে বঞ্চিত। হিজড়ারা এমনিতেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, তার উপর সম্পদের অধিকার থেকেও বঞ্চিত। চলার পথে লোকজনের বিভিন্ন কটু কথা শুনতে হয়। সমুদ্র সৈকতে গেলেও বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি রাস্তায় হাঁটার সময় হিজড়াদের লক্ষ্য করে অনেকে বোতল, ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে। অনেক যানবাহনেও হিজড়াদের তুলতে চায় না। জীবনের চরম দূঃসময়ে অর্থাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলে সেখানেও লেগে থাকে ভোগান্তি। কারণ হাসপাতালে হিজড়াদের জন্য কোন লাইন থাকে না। নিজের বসত হারা হিজড়াদের বাসা ভাড়াও কেউ দিতে চায় না।
নিজেদের অসংখ্য ভোগান্তির সাথে মৌলিক অধিকার থেকেও হিজড়াদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এত সমস্যা সংকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে হিজড়া জনগোষ্ঠিকে। দূর্ভোগ-লাঞ্চনা তাদের নিত্য সঙ্গী। উপজেলা সমন্বয়কারী উজ্জ্বল বড়ুয়া জানান, বাংলাদেশ লিগাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর সহায়তায় বিকশিত যুব মানব কল্যাণ সংগঠন রামু ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের অধিকার রক্ষার জন্য’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পেও আওতায় কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাঁও উপজেলা ৪৫০ জন হিজড়াকে আর্থসামাজিক, মানবিক উন্নয়ন, একতাবদ্ধ মনোভাব তৈরী, আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করবে।