শাহেদ হোছাইন মুবিন,উখিয়া।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে উখিয়া প্রেস ক্লাব চত্বরে ওষুধী ও ফলজ গাছের চারা রোপন করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও উখিয়া প্রেস ক্লাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
পরে প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রেমিক। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তার অবদান অবিস্বরণীয়। তিনি বেঁচে থাকলে চলমান বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভয়াবহ দূযোর্গ হতো না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রেসক্লাব এ ধরনের পরিবেশ তথা জনকল্যাণমুখী কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে হবে।” সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরীসিম। তবে কিছু কিছু অপসাংবাদিকতার কারণে বস্তুনিষ্ঠতা হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রেস ক্লাবের কোন বিকল্প নেই। কালের বিবর্তনে চাহিদার প্রেক্ষিতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। তবে প্রেস ক্লাবের সমকক্ষ হতে পারবে না।
তিনি তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের উদ্বিৃতি দিয়ে বলেন, অযাথিত ও গুজব ছড়িয়ে কাউকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। বর্তমানে মানুষের পকেটে পকেটে মোবাইল। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবার আছে। তবে মোবাইলে যা তা লিখে পোষ্ট করে একজন সম্মানীয় ব্যক্তির মান হানি করার কারো অধিকার নেই। তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শোকের মাসে উখিয়া প্রেস ক্লাবের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমি বিশ্বাস করি, এ কাজগুলো প্রকৃতি ও পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে বৃক্ষ হতে পারে বড় সহায়ক।
এসময় তিনি স্থানীয় বেকার যুবকদের চাকরির উল্লেখ করে বলেন, এনজিওগুলোতে স্থানীয়দের না দিয়ে রোহিঙ্গাদেরও অনেক নিয়োগ দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, শুধু স্থানীয়দের বেলায় অভিজ্ঞতা আর লেখাপড়ার অজুহাত তোলা হয়। নিম্ন পদে চাকরি করতে ইচ্ছুক শত শত প্রার্থী রয়েছে, যারা এসএসসি ও এইচএসসি পাস। তাদের কেন চাকরি হবে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় জনগোষ্ঠী। আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাই সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে লিখতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ সবুজায়নের চাদরে আচ্ছাদিত। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় জাতির জনকের পথেই হাঁটছে বর্তমান সরকার। ”
উখিয়া থানার ওসি আহমদ সনজুর মোর্শেদ মাদকের আগ্রাসন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, উখিয়ায় এখন হাত বাড়ালেই ইয়াবা পাওয়া যায়। উখিয়ায় শিক্ষিত বেকারদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে মাদকের প্রতি তরুণদের আসক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বিধ্বংসকারী মাদকের বিস্তার সমাজে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সচেতন অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন। না বুঝেই অনেক তরুণ এ পথে পা দিয়ে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে।
টেকনাফ সীমান্তে কড়াকড়ি বেশী হলেও উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে দিয়ে ঢুকছে লাখ লাখ ইয়াবা। তাই এসব ইয়াবা যারা আনছে/বা বিক্রি করছে তাদের প্রতিহত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে লিখতে হবে। প্রয়োজনে মাদক সেবন ও পাচার প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অন্যদিকে আসল ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে না লিখে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মান ক্ষুন্ন করার জন্য লিখে অপসাংবাদিকতার চর্চা হচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক। সাংবাদিকের বিভিন্ন কর্মকান্ড দেখে অবাক হই। এতে করে প্রকৃত সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে।
অনুষ্টানের বিশেষ অতিথি খাইরুল আলম চৌধুরী বলেন, উখিয়ায় অপ-সাংবাদিকতার রেওয়াজ বেড়েছে আশংকাজনক ভাবে। এক যা নিয়ে বর্তমান সমাজে লোকজন ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিনযাপন করছে। তিনি বলেন, এসব অপ সাংবাদিকতা সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে প্রকৃত সাংবাদিকদের আরো আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তাদের লেখনীর মাধ্যমে উঠে আসতে হবে সামাজিক সুখ দুঃখ, অভাব অনটন, অত্যাচার উৎপীড়ন সহ নানা অপকর্মের বাস্তব চিত্রসহ সচিত্র প্রতিবেদন। তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করার সুযোগ যাবে।
প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রফিক উদ্দিন বাবুল তার বক্তব্যে বলেন, প্রেস ক্লাবকে পাশ কাটিয়ে এক শ্রেণির সাংবাদিক নামধারী প্রতারকচক্র বিভিন্ন নামে বেনামে পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। তাদের অত্যাচারে মানসিক অতিষ্ঠ একাধিক জনসাধারণ উখিয়া প্রেস ক্লাবে বিচার দায়ের করছে। এসব হলুদ সাংবাদিকের কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে উখিয়া প্রেস ক্লাবের ব্যানারে সমবেত হয়ে এসব অপকর্মের তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সাঈদ মোহাম্মদ আনোয়ার এবং সঞ্চালনায় করেন সাধারণ সম্পাদক কমরুদ্দিন মুকুল।
বক্তব্য রাখেন, অর্থ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, নিবার্হী সদস্য ফারুক আহমদ, নুর মোহাম্মদ সিকদার সহ প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।