সাইফুদ্দীন আল মোবারক :
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের লাগামহীন অপকর্মে শরণার্থী শিবিরগুলো এক একটা সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফল অভিযানে বিগত কয়েক বছরে অর্ধ ডজন ডাকাত সর্দার ও কয়েক ডজন রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হলেও একের পর এক জন্ম নিচ্ছে নিত্য নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ। সাধারণ ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রোহিঙ্গা শীর্ষ ডাকাত ও কথিত আরসা নেতা নুরুল আলম ওরফে মাস্টার জুবায়ের নিহত হওয়ার পর টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নেয় কালা হাসান ও কালা সেলিম গ্রুপ। গ্রুপটি কথিত আরসা নেতা নুরুল আলমের অনুসারী হিসেবেও পরিচিত ছিল । কিন্তু হঠাৎ নিজেদের অন্তঃকোন্দলে ডাকাত সেলিম নিহত হওয়ার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নেয় ডাকাত জকির গ্রুপ। দীর্ঘ ২/৩ বছর সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েমের পর র্যাবের সফল অভিযানে জকির গ্রুপের প্রধান ডাকাত জকিরসহ ৩ শীর্ষ ডাকাত নিহত হলে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গ্রুপের উত্থান হয়। কিন্তু বেশি দিন টিকেনি তাদের সন্ত্রাসী রাজত্ব।
সর্বশেষ মোছনী শরণার্থী শিবিরে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে ডাকাত কালা হাসান গ্রুপ। সাম্প্রতিক সময়ে বাহিনীটি শালবাগান, মোচনী নয়াপড়া ও লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে। একসময়ের শীর্ষ ডাকাত, মোচনী নয়াপড়া আনসার ব্যারাক হামলা ও আনসার কমান্ডার হত্যা মামলার অন্যতম আাসামী মোচনী নয়াপড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এইচ ব্লকের শেড নং-৬৩৫/১ (এমআরসি নং-৩৯২২৫) এর মোঃ হাসান ওরফে কালা হাসানের নেতৃত্বে গড়ে উঠে নতুন সন্ত্রাস বাহিনী। বিগত কয়েক মাসে এ বাহিনী কর্তৃক বেশ কয়েকটি অপহরণ, মুক্তিপণ বাণিজ্য ও প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া- যা স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কতিপয় রোহিঙ্গা ও ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, কালা হাসান আনসার ক্যাম্প লুট ও আনসার হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে পুরাতন ডাকাত বাহিনীর যেসব সদস্য দীর্ঘ ১ বছর যাবৎ আত্মগোপনে ছিল, তাদের সংগঠিত করে গড়ে তুলে নিজস্ব নতুন বাহিনী। বর্তমানে এই গ্রুপে মোচনী নয়াপড়া আনসার ব্যারাক লুট ও আনসার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ও উক্ত মামলায় জেল ফেরত কালা হাসান (যার -জিআর-২৪৪/১৬ টেকনাফ থানা, জি আর-০৯/১৭ নাইক্ষ্যংছড়ি থানা, এসটিপি ৫২/ কক্সবাজার ৪ নং কোর্ট সহ রয়েছে অর্ধডজন মামলা), ডাকাত নুরুল আলমের ছোট ভাই ও কালা সেলিম বাহিনীর তৎকালীন সেকেন্ড ইন কমান্ড ও একাধিক মামলার আসামি সদ্য জেল ফেরত নুর কামাল, শীর্ষ ডাকাত মোঃ হাসেম, ডাকাত ভুলো, ইসমাইল, মুনিয়া, মাঙ্গাইয়া ও রাসেলসহ ২০-২৫ জন নতুন পুরাতন ডাকাত যোগ দিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে আবারো আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাকাত জকির অধ্যায়ের পতনের পর বিভিন্ন ভাবে শক্তির মহড়া প্রদর্শন করে নিজেদের উত্থানের জানান দেয় এ বাহিনী। এই বাহিনীর বিভিন্ন অপকর্মের অস্ত্রসহ ভিডিও ও স্থিরচিত্র প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে এ বাহিনীর হাতে অপহরণের শিকার হয় মোচনী নয়াপড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সংলগ্ন লেদা নুরালী পাড়ার দোকানদার ছৈয়দ আলমের পুত্র আজিজুর রহমান প্রকাশ মঈঙ্গা। আর এই অপহরণ কাণ্ডের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আই ব্লকের সোলতান আহমদের পুত্র আব্দুল মোনাফকে প্রশাসনকে অবহিত করার অজুহাতে গত ১ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে ধারালো অস্ত্রেরকুপে গুরুতর আহত করে। বর্তমানে সে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এছাড়া এ বাহিনীর বিরুদ্ধে গত রমজানের ইদে কুতুপালং থেকে লেদায় বেড়াতে আসা জনৈক রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ করে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ নেয়া সহ রয়েছে একাধিক অপহরণ ও মুক্তিপণ বানিজ্যের অভিযোগ।
রোহিঙ্গা শিবির ও তৎসংলগ্ন লেদা-মোচনী-জাদিমোরা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতির জন্যে এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযানের দাবি জানান স্থানীয় সচেতন মহল।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ১৬ আর্মড পুলিশের অধিনায়ক এসপি তারিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে যে ছয়/সাতটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ১৬ এপিবিএন সবসময় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি ডাকাত কালা হাসান গ্রুপের ব্যাপারেও আমরা খতিয়ে দেখছি।