কাইছারুল ইসলাম
# দৈনিক ৫ ঘন্টা বোট চলাচল বন্ধ;
#ঘাটের অব্যবস্থাপনার কারণে মহেশখালী ভ্রমণ বিরক্তিকর; পর্যটকদের মন্তব্য
#খালে পানি না থাকায় ঘাটেই রোগীদের মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়;
#খাল খননের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ
মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রুটে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আয় হলেও যাত্রী ভোগান্তি চরমে । দ্বীপবাসীর দুঃখই যেন এই ঘাট টি।খালে পানি না থাকায় দৈনিক পাঁচ ঘন্টা বোট চলাচল বন্ধ থাকে। এতে করে মহেশখালী জেটিঘাট ও কক্সবাজার ৬নং ঘাটে যাত্রীদের ভীড় জমে যায়। ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। ভাটার সময় মহেশখালী জেটিঘাট সংলগ্ন খালে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বোট চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। যাতায়াতের বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে ঘাটেই জোয়ারের অপেক্ষায় শত শত যাত্রীদের বসে থাকতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেটিঘাট সংলগ্ন খালটি ভরাট হয়ে খননের উপযোগী হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু বোট চলাচল স্বাভাবিক রাখতে খালটি খনন করা হয়নি। শীত মৌসুমে ভাটার সময় খালের পানি নেমে যায়। আর বোট চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। মহেশখালী উপজেলা থেকে কক্সবাজার জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই নৌপথ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি স্বাভাবিক রাখতে খালটি খননের উদ্যোগ নেয়নি ঘাট পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিরা। এদিকে যাত্রীরাও তাদের দিকে অভিযোগের তীর তোলেন। তারা জানান, বর্ষা মৌসুমে খালটি খননের উদ্যোগ নিয়ে অন্তত বোট চলাচলের উপযোগী করা দরকার ছিল। এতে করে দৈনিক নদীপথে যোগাযোগ করা প্রায় ৬/৭ হাজার মানুষের নির্বিঘেœ যাতায়াত নিশ্চিত হতো। শনিবার (৯অক্টোবর) বিকেল ৫টায় মহেশখালী জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ কক্সবাজার পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকে মহেশখালীর সৌন্দর্য্য দেখতে আসা পর্যটকও। কিন্তু খালে পানি না থাকায় বিষন্ন মনে বোটে ও ঘাটের পাশে বসে থাকে তারা। ঘাটের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি জানান, খালে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে করতে রাত ৮টা বেজে যাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
আহসান, রহিম, উজ্জল সহ একাধিক পর্যটক জানান, সকালে মহেশখালীর পর্যটন স্পট দেখতে এসেছেন তারা। সারাদিন ঘুরাঘুরির পর ঘাটে এসে আটকে পড়েছে। তারা কখন কক্সবাজার ফিরতে পারবে সেই শঙ্কায় ঘাটের কোনায় বসে আছেন। মহেশখালী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। কিন্তু মহেশখালীর মত এত অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা তাদের চোখে পড়েনি। তারা মহেশখালী ভ্রমনকে খুবই বাজে অভিজ্ঞতার অংশ মনে করছেন। কাপড়ের ব্যাগ হাতে বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘাটের এক কোণায় বসে থাকা আয়েশা বেগম নামের এক মহিলা জানান, বাচ্চাকে কক্সবাজারে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর ডাক্তারের সিরিয়াল দেয়া আছে। কিন্তু এখন ঘাটে এসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। জোয়ারের পানি পানি আসতে বাচ্চার ডাক্তার দেখানোও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
এদিকে গুরুত্বর অসূস্থ রোগীদের কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছেনা রোগীর স্বজনরা। তাদের অভিযোগ খালে পানি নেই। তার উপর কাঁদায় বোট আটকে থাকে। পাশাপাশি রোগী পরিবহনের বিকল্প পথও করা হয়নি। নিরুপায় হয়ে রোগী নিয়ে ঘাটেই অপেক্ষা করতে হয়। এর কারণে রোগীদের ঘাটেই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। আর স্বজনদের আহজারি করা ছাড়া কোন পথ খোলা থাকেনা।
সমাজ ও উন্নয়নকর্মী সালাহ উদ্দীন বলেন, বর্তমানে যে ঘাট পারাপার সেবা আছে সেটা খুবই দুর্বল, নাজুক ও হয়রানি মূলক। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ কক্সবাজার পারাপার করে। এদের মধ্যে নারী, শিশু, বৃদ্ধা থাকেন। এতগুলা মানুষের জন্য কোন টয়লেট ব্যবস্থা নাই। ঘাটে টোল সিস্টেম থাকলেও কোন ধরণের শৃঙ্খলা নেই। যার ফলে যাত্রী হয়রাণী চরম আকার ধারণ করেছে। ঘাটে টিকেট কাউন্টার চালু করে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। আর সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
অপরদিকে খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেই এই ঘাট পরিচালনা করা হয়। কিন্তু যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত, ঘাটের চলমান অনিয়ম এবং দুর্নীতি বন্ধে তাদের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেই। ঘাটে ২৪ ঘন্টা বোট চলাচল নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ কি ভ‚মিকা নিচ্ছেন সেই বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহফুজুর রহমান জানান, আপাতত ভাটার সময় পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বোট চলাচল স্বাভাবিক রাখতে তাৎক্ষণিক কোন ভূমিকা রাখা যাচ্ছে না। তবে এই বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশাকরি বিষয়টি সমাধানে কাজ শুরু করা হবে।
ঘাট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ডিডিএলজি শ্রাবস্তী রায় জানান, চলমান সমস্যাটি নিরসনে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলাপ করা হয়েছে। খুব দ্রুত বোট চলাচল স্বাভাবিক করতে যে ধরণের উদ্যোগ নেয়া দরকার তা নেয়ার আশ্বাস দেন।