বার্তা পরিবেশক :
অল্প বয়সে হোটেল বয় থেকে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর ইয়াবা ডন জসিম উদ্দিন নাহিদের অকাল সাম্রাজ্যের পেছনে রয়েছে নানান রহস্য।
সূত্রে জানা যায়, জসিম উদ্দিন নাহিদ কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ইয়াবা পাচার করত। তার এক ইয়াবা পার্টনার ঢাকার গাজিপুরের ইয়াবা সম্রাট জিয়াকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে র্যাব-১১ আটক করেছিল। ইয়াবাগুলো নাহিদের বলে র্যাবের আটককৃত ব্যক্তি স্বীকারোক্তিতে জানায় এবং জসিম উদ্দিন নাহিদের সাথে তার নিয়মিত ব্যবসায়িক যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছে। জসিম উদ্দিন নাহিদ কক্সবাজারে বিভিন্ন জমি দখল করেছে এবং অনেক ব্যবসায় জড়িত। তিনি ডিবি হারুন নামে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে মিলে কাজ করতেন। ডিবি হারুনের সহায়তায় তিনি অনেক অবৈধ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উদ্দিন ও মায়ের নাম রাহেনা আক্তার।
দেশের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় ২০২৩ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খসড়া তালিকায় জসিম উদ্দিন নাহিদের নাম ছিলো। এর আগেও কয়েকবার তার নাম আসার পরেও ডিবি হারুনের ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ায় ও তার সাথে গভীর সম্পর্ক থাকায়, তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়। পরে ২০২৩ সালের খসড়া তালিকা থেকে তার নাম বাদ দিতে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল ডিবি হারুন।কক্সবাজার সহ সারাদেশের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় নাহিদ ও আর কয়েকজন ব্যবসায়ীক বন্ধুর নামও রয়েছে।
দুটো বাস পরিবহন কোম্পানির মালিকঃ জসিম উদ্দিন নাহিদ কেবল ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িতই ছিল না, সে বিস্তৃত একটি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। সে কক্সবাজারে বিভিন্ন জায়গা দখল করেছিল এবং অনেক ব্যবসায় জড়িত ছিল। জানা যায়, নাহিদ ঢাকায় ভিক্টর বাস সার্ভিস পরিবহনে দুটো বাস সহ আরও অনেকগুলো পরিবহন কোম্পানির মালিক। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করা ডিবি হারুনের সংস্পর্শে সার্ভার সহ থানা থেকে মামলা উদাও এবং জসিম উদ্দিন নাহিদ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। ডিবি হারুনের সহায়তায় অনেক অবৈধ কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অনেকগুলো মামলা হয়েছিল, যা সে ডিবি হারুনের মাধ্যমে সার্ভার থেকে চিরতরে মুছে ফেলে। ডিবি হারুনের গোপন ছায়ায় স্থান পাওয়ার কারণেই এতবড় মাফিয়া ডন হয়েও তার বিরুদ্ধে এখনো থানায় একটা মামলাও নয়। দুদক ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ডিবি হারুনের যধামে গোপানে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নেয় বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। ৭০০০ টাকার বেতনে চাকুরী করে সে এখন শতকোটি টাকার মালিক। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জসিম উদ্দিন নাহিদ তার অপরাধ জীবন শুরু করেছিল মহেশখালীতে গাড়ি ডাকাতি করে। এক পর্যায়ে গাড়ি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে তাকে এলাকা থেকে দূরে কক্সবাজারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০১০ সালে কক্সবাজারের সুগন্ধা এলাকার পূর্বপার্শ্বে রিগ্যাল প্যালেস হোটেলে মাত্র ৭০০০ টাকা ন্যূনতম বেতনে চাকরি করতো। সে সময় তার পরিচয় হয় অবৈধ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে। এই সময় থেকেই তার অবৈধ কার্যকলাপের সূচনা হয়। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হওয়া ও উত্থান: হোটেলে চাকরির সময় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে জসিম উদ্দিন নাহিদ অবৈধ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সে এই ববসায় বড় গডফাদার হয়ে ওঠে এবং কক্সবাজারে একটি শক্তিশলী অপরাধ চক্র গড়ে তোলে। এই অবৈধ কার্যকলাপের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সে তার অবৈধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। প্লট দখল ও ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য: জসিম উদ্দিন নাহিদ কক্সবাজার কলাতলী বি-ব্লকে ফ্লাট, মামুনের দোকানের সামনে ডিবি হারুনের ক্ষমতাবলে ডিবি হারুন ও জসীম উদ্দীন নাহিদ যৌথ মালিকানায় প্রায় ৩ কানি মতো খালি জায়গা দখল করে। কক্সবাজার পৌরসভায় সমবায় সুপার মার্কেটে জসিম উদ্দিন নাহিদের দুটো দোকান আছে। আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের কারণে সে এতো কম বয়সে এতো সম্পত্তি অর্জন করতে পেরেছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কক্সবাজার একটি স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকও কিনে নিয়েছিল বলে জানা যায়। ঐ সম্পাদক পদটির আড়ালে ছিল নারী ও মাদক ব্যবসা। এ এলাকায় স্কুল কলেজের ছাত্রদের দিয়েও মাদক সেবন ও ব্যবসা করাত সেই জসিম উদ্দিন নাহিদ। তার ক্ষমতা ও টাকার কাছে সব অন্যায়, গুম, মাদক ব্যবসা, কন্টাক্ট কিলারের মত অপরাধও মাটি চাপা পড়ে যেত। বিভিন্ন জায়গা দখল নিতে আওয়ামীলীগের আমলে নাহিদ ডিবির হারুন ও সামরিক বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতো। এছাড়া থানায় কয়েকটি মাদকের মামলা থাকলেও তা ডিবি হারুনের নির্দেশে সার্ভার থেকে মুছে ফেলা হয়। বিভিন্ন সময় সামরিক বাহি- নীর উর্ধ্বতন কর্মকতার সাথে ছবি তোলে সে ফেইসবুকেও পোস্ট করতে দেখা যায়। গায়েন্দা তথ্য ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, জসিম উদ্দিন নাহিদ মহেশখালীতে রাতে তার গ্রামের রাস্তায় গাড়ি ডাকাতি করত। এক পর্যায়ে সেই জসিম উদ্দিন নাহিদ গাড়ি ডাকাতিতে ধরা পড়লে এলাকার মুরব্বিদের চাপের মুখে তার বাবা ও তার পরিবার তাকে এলাকা থেকে দূরে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেয়। জসিম উদ্দিন নাহিদ গ্রেফতার শীঘ্রই গ্রেফতার হবে বলে স্থানীয়রা আশা করছেন। সে গ্রেফতার হলে সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসা কমে যাবে। জসিম উদ্দিন নাহিদ গ্রেফতার হলে কক্সবাজারের ইয়াবা ডন ও অপরাধ জগতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তার গ্রেফতারের ফলে এলাকায় স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রদের ইয়াবা ও মাদকাসক্ত থেকে বাচানো যাবে। জসিম উদ্দিন নাহিদ গ্রেফতার হলে মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা সিন্ডিকেটদের ব্যবসা এবং অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ হবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।