মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
 সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মাদক নির্মুল সম্ভব -বাইশারীতে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মত বিনিময় সভায় পুলিশ সুপার কাওছার দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে : রামু সুজনের ইফতার মাহফিলে বক্তারা রুর‍্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে দোয়া  ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত চকরিয়া ডাকাতি মামলার তিন আসামীকে গ্রেফতার করেন পুলিশ লামায় ঋণের চাপে গলায় ফাঁস দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের আত্মহত্যা পেকুয়ায় লবণমাঠ দখলে নিতে ফাঁকা গুলি ছুটলো র্দূবৃত্তরাঃআহত-১৬ চকরিয়ায় অস্ত্র,মাদক ও টমটম চুরি মামলা মিলে ৪ আসামী গ্রেফতার মহেশখালী প্রেস ক্লাবের আয়োজনে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বাইশারী ইউনিয়ন যুবদল,ছাত্রদলের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  মাতারবাড়ীতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ:উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি সেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিভাগ প্রায় অকার্যকর

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪
  • ১৩৪ বার পঠিত

।। এম আর আয়াজ রবি, বিশেষ প্রতিবেদক।।
উখিয়া একটি বিশেষায়িত উপজেলা। উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষ অধিবাসীদের সাথে ২০১৭ সালে পাশ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে জোরপুর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা যোগ হয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের বাস। গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ব ব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প (এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্প (এইচজিএস) অধিনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন এনজিও সংস্থা জেলা ও উপজেলা ব্যাপী হাসপাতাল, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল নিয়োগসহ নানা সহায়তা করে আসছিল।

কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় সম্প্রতি এসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ না থাকায়, যথাযথ কর্তৃপক্ষ গত ৩০ জুন থেকে জনবল প্রত্যাহারের চিঠি প্রদান করেছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহ সরকারের নানা পর্যায়ে চিঠি প্রেরণ করে জানানো হয়। ফলে উখিয়া উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন শংকা।
এরই ফলশ্রুতিতে, উখিয়াবাসীর সরকারি চিকিৎসাসেবা নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারনে হতাশা দেখা দিয়েছে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা সংকটে, অত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দকৃত অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগে এনজিও নিয়োগপ্রাপ্ত ৯২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকছে না গত জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় গত রোববার শেষ হয়েছে এনজিও এর অধীনে বাস্তবায়ন করা এসব প্রকল্প।

এ নিয়ে উখিয়া উপজেলায় গণমানুষের চিকিৎসা সেবায় বিপর্যয়ের শংকা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প (এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্প (এইচজিএস) অধিনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন এনজিও সংস্থা জেলা ও উপজেলা ব্যাপী হাসপাতাল, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল নিয়োগসহ নানা সহায়তা করে আসছে।

তবে অন্যসুত্রে জানা যায়-এই প্রকল্পগুলো সাময়িক বন্ধ হলেও বিশ্বব্যাংকের অধীনে এসব প্রকল্প আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএসও বাস্তবায়নের জন্য আগামীতে চুক্তি হচ্ছে। ফলে, জানুয়ারি ২০২৫ সাল থেকে আইএসও জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এসব প্রকল্পের দায়িত্ব পাবেন এবং এটি ধারাবাহিক থাকবে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারিভাবে নিয়োগ করা জনবল ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অধীনে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সেন্টমার্টিন হাসপাতাল, জেলার ৭২ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ১৯৯ জন, উখিয়া হাসপাতালের ৯২ জন, টেকনাফ হাসপাতালের ৮০জন, সেন্টমার্টিন হাসপাতালের ১৬ জন, পেকুয়া হাসপাতালে ৫২ জন, চকরিয়া হাসপাতালে ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালনের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া ৭২টি ইউনিয়ন হাসপাতালে ৩ শতাধিক কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন।
উখিয়া হাসপাতালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদায়ন করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৬৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী না থাকলে হাসপাতালটি ভর্তি রোগী, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবায় বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছে স্বয়ং হাসপাতালটি চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। তৎমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট ১২ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট, নার্স ও মিডওয়াইফ ১২ জন সহ ৪৩ জন স্টাফ থাকবে না।
শুধু তাই নয়, এই বিশাল জনবল শূন্যতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত গাইনি ও সিজার বিভাগের সেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের মতে, প্রতিদিন গড়ে প্রচুর রোগীকে বর্তমানে হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়, সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক বা জনবল দ্বারা এই চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কঠিন।

সরকারি চিকিৎসাসেবা শতভাগ সরকারের অধীনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন পালং খালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বরাদ্দ অর্থের ২৫ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর। এই অর্থ সরাসরি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের জমা হবে। সরকারই বাস্তবায়ন করবে জনবল নিয়োগসহ সব কার্যক্রম। এখানে আন্তর্জাতিক বা দেশীয় এনজিওর অধীনে তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। এতে এনজিওর উপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। এটা দেশের জন্য শুভকর না’।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা) উখিয়া উপজেলা সভাপতি সাংবাদিক আয়াজ রবি বলেন, ” বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেএ সেবা কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ হবার ঘটনায় উখিয়াবাসী বড় একটা ধাক্কা খাবে। কারন, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যে সকল সেবা এতদিন বিদ্যমান ছিল, তার শুন্যতাও অনুভব করবে। অন্যদিকে আমাদের মনে প্রশ্নই রয়ে যায়, সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ বা চিকিৎসাসেবা কেন এনজিওর প্রকল্পের উপর নির্ভর করবে। শতভাগ সরকারি জনবল নিয়োগ, অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অর্থায়নগুলোও সরকারি মনিটরিং এ চললে, এদেশের নাগরিকরা সরকারিসেবা গ্রহণ করতে বেগ পেত না।

উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার সাজেদ শাওন অত্র প্রতিবেদককে বলেন, ” বিশ্বব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প (এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্প (এইচজিএস) বন্ধ হলেও নতুনভাবে অন্য নামে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে
স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতা করার জন্য ফান্ড আসবে। হয়ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে হয়েও যেতে পারে বলে আমরা শুনেছি।তা বাস্তবায়ন হবার পুর্ব পর্যন্ত উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ বিভিন্ন বিভাগের সেবা কার্যক্রমে একটু বেগ পেতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তারপরেও আমরা সেবাদিয়ে সেবাপ্রার্থীদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাব”।
উখিয়া উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রঞ্জন রড়ুয়া জানান, ” সব সময় এনজিও এর উপর নির্ভরশীলতা হয়ত সামনে আর থাকছে না। এটা কেটে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অধীনে আইএসও চুক্তি হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে এই চুক্তি। এটা হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা আইএসও’র মাধ্যমে। ফলে উখিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম দ্রুত আবারো পুরো দমে শুরু করা যাবে। স্বল্প জনবল নিয়ে হলেও আমরা চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে স্থানীয় মানুষ সঠিক চিকিৎসা পায়”।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs