কাইছারুল ইসলাম:
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। দূর- দূরান্ত হতে কক্সবাজার বেড়াতে এসে পর্যটকরা
নারিকেল জিঞ্জিরা খ্যাত মোহনীয় দ্বীপ সেন্টমার্টিন ঘুরে আসার লোভ সামলাতে পারেনা নিঃসন্দেহে। মোহনীয় এ দ্বীপ টেকনাফ উপজেলা থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে নাফ নদী হয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা ছোট – বড় জাহাজ, মাছধরার ট্রলার এবং স্পীড বোটে যাতায়াত করেন।
ইতিহাস হতে জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকরা এ দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতো। তখন তারা এ দ্বীপের নামকরণ করেছিল ‘জাজিরা’। পরবর্তীতে যেটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়। সেন্টমার্টিনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় যেকোনো ধরণের স্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন একের পর এক রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল জোন। খবর নিয়ে জানতে পারি, হোটেল, মোটেল জোনের বেশিরভাগ মালিকপক্ষ বহিরাগত। হোটেল মালিকপক্ষের জীবনমানের উন্নয়ন সাধন হলেও স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মানে আসেনি তেমন কোন বৈপ্লবিক পরিবর্তন। মৌসুম ভিত্তিক হাজার হাজার পর্যটক আসায় স্থানীয়দের মধ্যে বেড়েছে ব্যবসায়ীয় প্রণোদনা। ফলে বেড়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেড়েছে ইনকাম সোর্স। তবে মোটা অংকের ইনকাম সোর্স রাঘব বোয়ালদের দখলে। এ দ্বীপটি আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদে রয়েছে ১ জন চেয়ারম্যান, ৯ জন ইউপি সদস্য, ৩ জন মহিলা মেম্বার। সেন্টমার্টিনের মানুষ শিক্ষা-দীক্ষা অনগ্রসর হলেও সেখানে রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মক্তব। রয়েছে বি জি বি ক্যাম্প, টুরিস্ট পুলিশও।
দ্বীপটিতে প্রতিদিন অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের যাতায়াত, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, পরিবেশ দূষণ, পর্যটকদের অসচেতনতা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কারণে সেখানকার ইকো-সিস্টেম অর্থাৎ প্রতিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিন্তু অদৃশ্য কারণে দ্বীপটিকে বাঁচাতে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব কারণে দ্বীপটির প্রবাল, শৈবাল, সামুদ্রিক কাছিম, লাল কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ নানা জলজ প্রাণী এবং জীব-বৈচিত্র্য এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
প্রতিদিনই বেশ কয়েকটি জাহাজ নিয়মের চাইতে বেশি যাত্রী বহন করে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে নাফ নদী হয়ে সেন্টমার্টিন যায়। জাহাজের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া সেন্টমার্টিনের সুনীল আকাশ হয়ে যায় কালো ধোঁয়ায় ভর্তি। সেন্টমার্টিনের রাস্তার অলিগলিতে ও সমুদ্রসৈকতে যত্রতত্র পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট, পুরাতন কাপড় দ্বীপের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করে দেয়। রাস্তাঘাটে টুকটাক বিভিন্ন সচেতনতামূলক নির্দেশনা থাকলেও পর্যটকরা বেপরোয়া চালচলনে নিয়মের তোয়াক্কা করেন না বলেই চলে।
সেন্টমার্টিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি পণ্যের দাম দ্বিগুণ । একজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সপ্তাহে একদিন টেকনাফ বাজারে এসে পণ্যগুলো ক্রয় করেন। দূর থেকে কিনে যাওয়া আসার খরচ বেশি হওয়ার অজুহাতে পণ্যের দাম বেশি বলে জানান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জীব-বৈচিত্র অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার এসব জীবকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও এর যথার্থ প্রয়োগ হচ্ছেনা। যদি সরকার জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে না আসে মোহনীয় এই দ্বীপ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। তিনি সেন্টমার্টিনকে রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।