বিশেষ প্রতিবেদক •
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফসহ জেলা শহরে রোহিঙ্গা শিশু কিশোর যুবক যুবতিদের ভাড়া করে পেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে পাচার করা হচ্ছে দেশব্যাপী। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে ব্যবহার হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় হতদরিদ্র লোকজন। তাদের পেছনে রয়েছে জেলার বড় বড় রাঘব বোয়াল। যারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে বা পর্দার অন্তরালে থেকে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে মরিচ্যা চেক পোস্টে বিজিবির হাতে ধরা পড়েছে দুই রোহিঙ্গা যুবক। তারা বাঙালি সেজে এই পাচার করছিল। গত ৩০ আগস্ট লোহাগাড়া থানায় পুলিশের হাতে আটকের পর জানা যায় তারা দুইজনই রোহিঙ্গা। তারা ইয়াবা পাচার করছিল পেটের ভেতরে করে। মাত্র তিন দিনের মাথায় আরো তিন রোহিঙ্গা যুবককে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার নতুন রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই হাজার ৩৫০ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন টেকনাফের মুচনী রোহিঙ্গা শিবিরের আছাদ আলীর ছেলে মো. রফিক ও মো. শফির ছেলে আক্তার ফারুক। কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মাদক বেচাকেনার খবরে নতুন রেলস্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই রোহিঙ্গা যুবককে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পেটের ভেতর বিশেষ কৌশলে ইয়াবা লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেন। পরবর্তীতে পায়ুপথ দিয়ে মোট দুই হাজার ৩৫০ ইয়াবা বের করে আনা হয়। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পেটের ভেতর ইয়াবা নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলো তারা। ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে সেগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে আসছিলেন ।তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট কক্সবাজারে পেটের ভেতর প্লাস্টিক মোড়ানো ইয়াবার বেলুন ফেটে মো. মোস্তফা নামের এক যবকের মৃত্যু হয়। সে টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের ছেলে। কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ইয়াবা পাচার ও অপরাধ দমনে কাজ করছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এবিপিএন)। জানা যায়, স্থানীয় একাধিক ইয়াবা সিন্ডিকেটে ৬ শতাধিক রোহিঙ্গা মাঝি ও ১২০০ সহকারী মাঝি রয়েছে। এদের অধিকাংশই ইয়াবা ও মানব পাচারের সংযুক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবা ও অস্ত্রের লেনদেনে ক্যাম্পের মাস্টার ও মাঝিরা ইয়াবা ও অস্ত্র লেনদেন করে দিনে দিনে বিত্তবান হচ্ছেন তারা। এছাড়াও নিজেদের প্রভাব আরো বাড়ানোর জন্য রোহিঙ্গারা অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলেও জানা গেছে। সাধারণ রোহিঙ্গা ও জেলহাজতে থাকা একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ক্যাম্পে চলছে মাস্টার মাঝিদের ত্রাসের রাজত্ব। সাধারণ রোহিঙ্গারা ইয়াবা পরিবহনে রাজি না হলে অপহরণের শিকার হয়। এমনকি শারীরিক নির্যাতন তথা হত্যার পর লাশ গুম করার মতো জঘন্য অপরাধও করছেন তারা। টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের ৭ জন মাস্টার ও মাঝির নাম পেয়েছে পুলিশ। তারা সরাসরি ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মূলত প্রশাসনিক দায়িত্বের সুবিধার্থে রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে মাঝি সহকারী মাঝি ও অপেক্ষাকৃত লেখাপড়া জানা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোককে মাস্টার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ১৫ দিনে চট্রগ্রামের পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।