শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
অনিয়ম ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে পরিচ্ছন্ন কক্সবাজার গড়তে সহযোগিতা চাইলেন নবাগত জেলা প্রশাসক চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযান:১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২ ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ মাতারবাড়ীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে জশনে জুলুছ ফাসিঁয়াখালীতে ১০কেজি ওজনের অজগর সাপ উদ্ধার কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে পবিত্র মাহফিলে মিলাদুন্নবী (স:) উদযাপন রেকর্ড বৃষ্টিতে কক্সবাজার প্লাবিত, পাহাড় ধ্বসে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও কক্সবাজার সদরে ৬ জনের মৃত্যু সাধারণ মানুষকে পুলিশ হয়রানি করলে আমি তাকে হয়রানি করবো- কক্সবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক শিশু ছাত্রের শ্লীলতাহানির অভিযোগে এক মাদ্রাসা শিক্ষক আটক কুতুবদিয়ায় এক ডাকাত আটক

ন্যায্য দাম নেই লবণের,লোকসান গুনছেন মহেশখালীর লবণ চাষিরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১
  • ৪২২ বার পঠিত

কাইছারুল ইসলাম,মহেশখালী।
লবণ শিল্পের জন্য মহেশখালী বিশ্ব সমাদৃত।জেলার সিংহ ভাগ লবন উৎপাদিত হয় মহেশখালীতে।
মহেশখালীর লবণ অন্যান্য এলাকার চেয়ে উচ্চ মানসম্মত হওয়ায় এক সময় মণ প্রতি (৪৪ কেজিতে এক মণ) ৬০০ টাকায় উচ্চ দামে বিক্রয় হত। কিন্তু বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের দাম নেই, মণ প্রতি বিক্রয় হয় ১৪০ টাকায়। কিন্তু এর মধ্যে লবণ চাষিরা পায় ১১০ টাকা। পূর্বে এত অল্প দামে লবণ কোনদিন বিক্রয় হয় নাই। যার কারণে লাভ তো নই বরং উৎপাদন খরচ ওঠছে না, লোকসান গুনছেন প্রান্তিক চাষিরা ।লবণের ন্যায্য মূল্য না থাকায় মহেশখালীর লবণ চাষীরা হতাশ। যে কোনো মুহূর্তে মহেশখালীর লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

গত রবিবার আর সোমবার পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীতে ঘুরে দেখা যায়, লবণের মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। কয়েক’শ একর জমিতে চাষিরা লবণ উৎপাদন করছেন। কিন্তু লবণের দাম না থাকায় সেই লবণ মাঠে স্তূপ করে রেখেছেন তাঁরা। লবণের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশার শেষ নেই তাদের । একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশীয় লবণের দাম নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার লবণ প্রকল্প কার্যালয় জানায় , চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। এই মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ২২ লক্ষ মেট্রিক টন। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ লক্ষ ১৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহেশখালীতে ৩ কানি (১২০ শতক) জমিতে লবণ চাষ করতে বর্গা দিতে হয় সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা। ১২০ শতক জমিতে ১ জন শ্রমিকের ৬ মাসে খরচ দিতে হয় ১ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে পলিথিন প্রয়োজন হয় পনেরো হাজার এবং পানি খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৩ কানিতে খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ১২০ শতক জমিতে লবণ উৎপাদিত হয় সর্বোচ্চ ৭৫০ মণ। যার বিক্রয়মূল্যে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা (এক মণ ১৪০ টাকা)। ফলে প্রতি ৪০ শতকে (১ কানি=৪০ শতক) লোকসান গুণতে হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। এভাবে দাম কমে যাওয়ায় বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছে লবণচাষীরা। অনেকে ঋণের টাকা পরিশোধের ভয়ে বাধ্য হচ্ছেন পালিয়ে যেতে।

মাতারবাড়ীর লবণচাষী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, এই মৌসুমে ৪০ কানি জমিতে লবণ চাষ করে দিশেহারা হয়ে পড়ছি। জমির লাগিয়ত, শ্রমিকদের বেতনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারতেছি না। লোকসান লেগে আছে। লবণ গুলো বিক্রি না করে জমিয়ে রাখতে হচ্ছে। সামনে কালবৈশাখী ঝড় আসবে যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।

লবণচাষি জুবাইদ বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৬০ কড়া ফসলি জমি ছিল,যেখানে প্রতিবছর ধান চাষ করতাম কিন্তু লবণের মাঠের বর্গা নিতে সে জমিটুকু বন্ধক দিতে হয়েছে,এখন ধান চাষের জমিটুকু ও নাই। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে এক মণ লবণের দাম ১৪০ টাকা। যা উৎপাদন খরচের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম। লবণ বিক্রয় করলে প্রতি কেজি পাই ৩ টাকা। লকডাউনে একটা চাউলের বস্তা ৩ হাজার টাকা। এদিকে বন্ধকি জমি গুলো কিভাবে খালাস করব সে চিন্তায় আছি। মৌসুমের শেষ দিকে ও দাম না বাড়লে পথে বসা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকবে না।
লবণ চাষি সমিতির সভাপতি এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সমস্যা সমাধানে আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি, সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। মানববন্ধন করলে ও কোন কাজ হচ্ছে না। আমাদের দাবি লবণ আমদানি বন্ধসহ লবণ বোর্ড গঠন এবং লবণের মূল্য মণ প্রতি অন্তত ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। লবণ চাষির সাথে জড়িত পঞ্চাশ হাজার মানুষকে বাঁচাতে লবণের নায্য মূল্য চূড়ান্ত করার বিকল্প নাই বলে মনে করেন তিনি।
কক্সবাজার বিসিকের পরিদর্শক ইদ্রিস আলী জানান, প্রান্তিক লবণ চাষিদের কাছ থেকে লবণ ক্রয় করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে লবণ আমদানি করার সুযোগ নাই। তবে কৌশলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অপ্রয়োজনীয় সোডিয়াম সালফেট, গ্লোভার সল্ট আমদানি করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে ৫৩ লক্ষ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে লবণচাষিরা কোন প্রণোদনা পান নাই বলে জানান। এভাবে চললে চাষিদের না খেয়ে মরা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs