আলিম উদ্দিন,কক্সবাজার:
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে চূড়ান্ত হতে চলেছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদ। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে এই খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে ঘোষণা হয়েছিলো দলের যে কোন শাখার সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তা কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু নানা জটিলতায় বারবার পিছিয়ে যায় কক্সবাজার জেলা কমিটি প্রস্তুতকরণের প্রক্রিয়া। তবে কমিটির কলেবর পূর্বের ন্যায় ৭১ সদস্য বিশিষ্ট হবে,নাকি বৃদ্ধি পাবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা গেছে প্রবীণ এবং নবীন প্রাক্তন ছাত্র নেতাদের সমন্বয়ে এই কমিটি সাজানো হয়েছে। সর্বশেষ কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন,সদর উপজেলা নির্বাচন সহ নানা বিষয়ে জেলা সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমানের সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্য হুইপ সায়মুম সরোয়ার কমল,মাহবুবুর রহমান চৌধুরী মেয়র এর প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ এবং চকরিয়াতে সাবেক এমপি জাফর আলম ও সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপির প্রকাশ্যে দ্বন্দ কক্সবাজার জুড়ে টক অফ দ্যা টাউন এ পরিণত হয়। এসব নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আওয়ামীলীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন,এর পর পরই প্রাণসঞ্চার হয় জেলা আওয়ামী লীগে৷
এর পরপরেই জেলার রাজনীতিতে গুঞ্জন চলছে, জট খুলতে শুরু করেছে ককসবাজার জেলা আওয়ামী লীগ কমিটির।
এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানায়,এতদিন জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি গঠনে ঐক্যমতে পৌছাতে পারছিলেন না,কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো,কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের বেশ কিছুদিন আগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের,ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মুস্তাফাকে কক্সবাজার জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিশেষ দায়িত্ব দেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দায়িত্বপ্রাপ্ত এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা জেলা সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান এর সাথে এই বিষয়ে কথাও বলেন, কিন্তু কমিটি গঠনের কার্যক্রম মোটেও এগোচ্ছিল না,তবে এবার দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনায় জেলা সম্মেলনের প্রায় ১৮ মাস পর ঘোষণা হতে চলছে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
আর এই আগামীর নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কারা আসছেন আওয়ামী রাজনীতিতে সেই আলোচনা এখন সর্বত্র। বিগত কমিটির কারো কারো পদ এর রদবদল হতে পারে, যুক্ত হতে পারেন সাবেক কয়েকজন ছাত্রনেতা, সহ-সভাপতি হিসেবে নাম আসতে পারে সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপি,কানিজ ফাতেমা আহমেদ,সাইমুম সরোয়ার কমল এমপি, লেফটেন কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত ফুরকান আহমেদ,এডভোকেট আব্বাস উদ্দিন,রেজাউল করিম,মাহবুবুল হক মুকুল,আব্দুল খালেক, এডভোকেট রঞ্জিত দাস,সাবেক জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি রহিম উদ্দিন প্রমুখ।
যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, মাসেদুল হক রাশেদ,রাশেদুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিত এর নাম। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আসতে পারেন নাজনিন সরোয়ার কাবেরী, নুরুল আজিম কনক, হেলাল উদ্দিন কবির, এম এ মঞ্জুর।এছাড়া অন্যান্য গুরুত্ব পূর্ণ পদে আসতে পারেন জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, খোরশেদ আলম, সোহেল আহমেদ বাহাদুর, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ, জসিম উদ্দিন চেয়ারম্যান, মহিদুল্লাহ, মির্জা ওবায়েদ রুমেল, এডভোকেট নুরুল ইসলাম সায়েম, এডভোকেট নাসরিন সুলতানা লিনা, এডভোকেট রবিউল এহসানসহ এক ঝাক সাবেক ছাত্রনেতা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন পরবর্তী সাড়ে ৮ মাস পর ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মরহুম় আশরাফুল ইসলাম। ওই সম্মেলনে এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাকে সভাপতি এবং সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়, তাদের কমিটির পাঁচ বছর পর ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করে জেলা সহ সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ সাত বছর পর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ২০২২ সালের ১৩ই ডিসেম্বর সৈকতের লাবনী পয়েন্টে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
তার মধ্যেই, জেলা আওয়ামী লীগের অধীন কক্সবাজার সদর উপজেলা, কক্সবাজার পৌরসভা, ঈদগাঁও, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া ও মাথামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলার সম্মেলন পরবর্তী কমিটি গঠন হয়েছে।
এবং সর্বশেষ ১৩ ই ডিসেম্বর ২০২২ সালের জেলা সম্মেলন পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখন কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়।
তাই তৃণমূল নেতৃবৃন্দের দাবি,যারা দীর্ঘদিন দলের সংগ্রামময় পথ চলায় জেল,জুলুম,হুলিয়া উপেক্ষা করে দলের জন্য নিবেদিত ছিলো তাদের যেন যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়৷
কোন হাইব্রিড, ছাত্রলীগ/যুবলীগ না করে সরাসরি উড়ে এসে জুড়ে বসা ব্যক্তি যেন কোনভাবেই পথ পদবী না পাই, সেদিকে যেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নজর রাখেন প্রত্যাশা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের হাজার হাজার তৃণমূল নেতা কর্মী ও সমর্থকদের।