শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে কক্সবাজার কমার্স কলেজের এইচএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা রামুর বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহারে ৮ দিন ব্যাপী বিদর্শন ভাবনা কর্মশালা শুরু ১৩ ডিসেম্বর  উখিয়ায় সরকারী জমি দখল করে রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে দোকান নির্মাণ টেকনাফে বিজিবি’র অভিযানে ৪ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার: আটক-১ মহেশখালীতে নবাগত ইউএনও সাথে সাংবাদিকদের সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় কক্সবাজার পৌর, সদর ও রামু উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন মহেশখালীতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ চকরিয়ায় হাইব্রীড ধান ও উফশী সার পেয়ে খুশিতে উৎফুল্ল উপকারভোগী কৃষকেরা চকরিয়ায় উপজেলা কৃষকদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এখন কক্সবাজারে।

দলবাজির অন্ধত্বে সাংবাদিকতার সব শেষ

সাঈদুর রহমান রিমন:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪
  • ৮২ বার পঠিত

:

আমি সব দেখে শুনে বুঝেই বলছি- দেশে সাংবাদিকতার ছিটেফোটাও আর অবশিষ্ট থাকছে না। সাংবাদিকতার নামে কেবল দালালি আর ভুয়াবাজি চলছে। চলছে সরকারি ও বিরোধী দলের ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর দালাল হওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা।

তাই বলে আপনি যথেচ্ছা সংবাদ লিখবেন, ছাপাবেন আবার ইচ্ছে হলেই নিউজ গায়েব করে দিবেন- এমন স্বেচ্ছাচারিতার অধিকার কে দিলো আপনাকে? দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের হাজার হাজার রাউন্ড গুলি চালিয়ে হত্যা করা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া কি প্রকাশ করছে? একই ঘটনায় আপনি কি লিখছেন, কি প্রচার করছেন? এসব ভেবে একাকিও কি লজ্জা পান না?
একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে এ অভিব্যক্তি আমার। আশপাশের পাঠকের সঙ্গে কথা বলে দেখুন- আরো জঘন্য সব মন্তব্য শুনতে পাবেন।

টাকা দিয়ে পত্রিকা কিনে ছুঁড়ে ফেলা পাঠকরাই প্রশ্ন তোলেন- আপনি সরকার দলের আস্থাভাজন চামচা, তাই বলে বৃহত্তর শিক্ষার্থী আন্দোলনকে নাশকতা বলে খবর লিখবেন? পাখির মতো নির্বিচার গুলিতে কতজন শিক্ষার্থী জনতা মারা গেল তার সংখ্যা এড়িয়ে যাবেন? লাশের পাহাড় পায়ে মাড়িয়ে মেট্রো রেল পোড়ানোর দৃশ্যটি আট কলাম জুড়ে ছাপাতে আপনার এতো উৎসাহ কেন? জঙ্গী, শিবির, নাশকতার ধোয়া তুলে সরকারের নানা রকম বাহিনী যে যুদ্ধ চালালো তাতে কারা মারা গেলো? সব লাশই কি শিক্ষার্থী আর নিরপরাধী জনতার? এ ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে কোনো প্রশ্ন তুলেছেন? তা না করে থাকলে কোথায় আপনার বিবেকী দায়বদ্ধতা? এটাই কি আপনার শেখা সাংবাদিকতা? আসলে এটাও জানি, বিবেকহীন কিছু আপনি করতে চান না- দলের প্রেতাত্মা সেসব করতে আপনাকে বাধ্য করে।

দলবাজির প্রেতাত্মা আপনাদের কাধে এমনভাবেই চেপে বসেছে যে, নিজের বিবেক, বুদ্ধি, মনুষ্যত্ব পর্যন্ত বিকিয়ে দিতে হয়েছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে চার জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হলেও সে ঘটনাকে অবলীলায় নিহত বলে চালিয়ে দিয়েছেন। ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো মিডিয়া কি সাংবাদিক হত্যার ঘটনাগুলোও অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছেন? কেন নেননি? নিজ সন্তানদের বলি দিয়েও টু শব্দটি করতে সাহস নেই আপনাদের, কারণ মেরুদণ্ড তো আরও আগেই ন্যুব্জ বানিয়ে ফেলেছেন। আপনাদের হাত বাধা, মুখেও ঝুলিয়েছেন তালা। সবকিছুই অন্ধ দলবাজির অভিশাপ।

আপনাদের সেসব অপকর্মের জের মাঠ সাংবাদিকদের কাধে চাপে। তারা হামলা, মারধোরের শিকার হন। আগে সরকার বিরোধী চরম আন্দোলন, হরতাল, কারফিউ ভঙ্গের মিছিলের পাশে হাজির হলে সাংবাদিকদের ঘিরে আন্দোলনরতদের হর্ষধ্বনি চলতো, আনন্দ মিছিল হতো। গরমে লেবুর শরবত বানিয়ে খাওয়াতো। আর এখন সাংবাদিক দেখলে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দেয়, হামলা চালায়। কারণটা কি? এ সবই দলবাজ সাংবাদিকদের পাপের ফসল, অথচ সাজা ভোগ করি মাঠের সংবাদকর্মীরা।

(তাই বলে আন্দোলনকারী, বিক্ষুব্ধ কোনো দল, গ্রুপ সাধারণ সাংবাদিকদের উপর নির্বিচারে হামলা চালাবে, গণমাধ্যমের গাড়ি ভাংচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দিবে সেসব জঘন্যতাও মেনে নেয়া যায় না। সাংবাদিকরা এতো এতো ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন, গুলি, সংঘাতের স্পটে যায় খবর সংগ্রহের জন্য, তারা কারো পক্ষে বিপক্ষে মিছিল করতে যায় না। এটুকু বিবেক বিবেচনা যাদের নেই তাদের আবার কিসের আন্দোলন? কোনো দাবি দাওয়া নিয়ে তাদের রাস্তায় দাঁড়ানোর যোগ্যতা থাকা উচিত নয়।)

যাই হোক, বলছিলাম দলবাজ সাংবাদিকদের কথা। সরকারি পা চাটা মাত্র ৪০/৪২ জনের সাংবাদিক সিন্ডিকেট কয়েকশ‘ বছরের সাংবাদিকতাকে ধ্বংস করে দিলো, নিশ্চিহ্ন করে দিলো। দুটি সরকারের আমলেই দুই গ্রুপ দালালের অভিন্ন অপকর্ম দেখেছি। আর এভাবে চলতে পারে না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সব ধরনের ‘ছাত্র রাজনীতি’ যেমন বন্ধ করে দেয়া দরকার, তেমনি সাংবাদিকতা থেকেও ‘রাজনৈতিক দালালি’ ঝেঁটিয়ে বিদায় করা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেন্ট্রাল পর্যায়ে দলবাজ দালাল সাংবাদিকদের তালিকা করা গেলে ঢাকার বাইরে তাদের আন্ডা বাচ্চাদের খুঁঁজে পেতে বেগ পেতে হবে না। সাধারণ সাংবাদিক সমাজকে রক্ষা করতে তাদের তালিকা প্রকাশ করাটা খুব জরুরি।

রাজনৈতিক দলগুলো ন্যূনতম নীতিবোধ থেকে সাংবাদিকদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলীয় ইউনিট খুলতে লজ্জা পেয়েছে। অথচ নির্লজ্জ, বেহায়া শ্রেণীর কিছু সাংবাদিকের মধ্যে সেটুকু লজ্জাবোধও নেই। তারা সাংবাদিকতার মধ্যে নিজে নিজেই অতিউৎসাহে দলীয় ফ্রন্ট খুলে বসেছে। দল থেকে তারা শিশু লীগের মতো অনুমোদনও জোটাতে পারেনি।

সাংবাদিকদের দলবিহীন গ্রুপিং, সিন্ডিকেট আগেও ছিল- তবে সেসব সচল থাকতো কেবলই সাংবাদিক ইউনিয়ন বা প্রেসক্লাবের নির্বাচন কেন্দ্রীক। নির্বাচন শেষ হলেই আবার সভাই অভিন্ন কাতারের সাংবাদিক হয়ে উঠতেন। আর এখন দেখি, দলবাজির স্থায়ী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। রাজনীতির প্রকাশ্য লেজুরবৃত্তি যে অনেকের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনেরই পুঁজি!

যেখানে বিশ্ব জুড়ে সাংবাদিকরা প্রেসব্রিফিংসহ জাতীয়, আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানসমূহে সাবলীল ভাবে বলে উঠেন, “মিস্টার প্রেসিডেন্ট,,,“ সেখানে আমাদের দেশের দলবাজ সাংবাদিকদের মুখে ফুটে ওঠে, ‘মাননীয় নেত্রী, প্রিয় আপা কিংবা প্রিয় কাদের ভাই।’ থু মারি এ সাংবাদিকতাকে। রাষ্ট্র প্রধান আপনার কবেকার আত্মীয়? কিসের আপা? সবার সামনে ঘনিষ্ঠতা প্রকাশের ধান্দাবাজি কৌশল খাটানো বন্ধ করুন। মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে সাংবাদিকতাকে খাদের কিনারে নামিয়েও ক্ষ্যান্ত হননি আপনারা, এবার পচা নোংরা ডোবার মধ্যে চুবানোর কাজটিও চালিয়ে যাচ্ছেন।

অনুষ্ঠান কিংবা প্রেসব্রিফিংয়ে `নেত্রী’ বলে কথা বলার শখ হলে দলের উর্দি পড়ে দলীয় কার্যালয়ে চলে যান। `আপা‘ বলার ইচ্ছা জাগলে ব্যুম, ক্যামেরা রেখে নেত্রীর বাসভবনে গিয়ে আত্মীয়তার হ্যাডম দেখান। রিপোর্টারের আইডি গলায় ঝুলিয়ে, হাতে কলম নিয়ে, ক্যামেরা সেটিং করে তারপর নেত্রী, প্রিয় আপা ডাকার এতো শখ জাগে কেন? নাকি অফিসিয়াল কাঠামো, সাংবাদিকতার প্রচলিত ধারা ধুয়ে মুছে গিলে ফেলেছেন? যত্তোসব ইতরের ছা বাচ্চারা !!

আপনি নির্দিষ্ট রাজনীতি, মতাদর্শের ধারক বাহক হয়েও সাংবাদিকতা করতে পারবেন, পত্রিকা ছাপাতেও বাধা নেই। তবে লোগোর সঙ্গে ছোট হরফে হলেও লিখে দিন – ‘এটা কইয়া দিমু দলের মুখপত্র।’ অথবা প্রিন্টার্স লাইনে লেখা যেতে পারে : “এ পত্রিকার সংবাদ ও সম্পাদকীয়তে সরকারের মতামত প্রতিফলিত হয়ে থাকে।” এটাই স্বচ্ছতা। তাতে সাধারণ মানুষ নিরপেক্ষ মিডিয়া ভেবে অন্তত প্রতারিত হবেন না।

(লেখক :সাঈদুর রহমান রিমন,সিনিয়র সাংবাদিক)

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs