রিয়াজ উদ্দিন:
ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আয়োজনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের অংশগ্রহণে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
৩০ মে (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৪:০০ টায় হোটেল শৈবালে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আয়োজনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের অংশগ্রহণে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) এস এম ফেরদৌস ইসলাম।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ ফয়েজ উল্যাহ, কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, কক্সবাজার জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী, জেলা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার, জেলা ক্যাবের সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীবৃন্দসহ বিভিন্ন অংশীজন এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন সভায় উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে সাথে অধিদপ্তরের কার্যক্রমও বেগবান করা হচ্ছে। তিনি অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত বাজার তদারকি, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করেন।
কক্সবাজার জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী গতকাল কক্সবাজারে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন ব্যবসা হচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তিনি জানান ILO এর সহযোগিতায় রেস্তোরাঁসমূহে কর্মরত সকলের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী গতকাল কক্সবাজারে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এঁর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি রেস্তোরাঁয় অভিযানের ক্ষেত্রে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করার অনুরোধ জানান।
জেলা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বিভিন্ন খাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করার কথা বলেন। এছাড়াও তিনি বীচ সংলগ্ন ভ্রাম্যমাণ খোলা খাবারের দোকানগুলোতে বিশেষ তদারকির জন্য অনুরোধ জানান।
জেলা ক্যাবের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার শহরের দক্ষিণাঞ্চলের ময়লা আবর্জনা প্রতিনিয়ত সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে। এতে কার্বন নিঃসৃত হচ্ছে। এছাড়াও পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। আমরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। তিনি কক্সবাজার একটি স্বাস্থ্যকর স্থান হোক এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে গত ২০-২৫ বছরে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। পর্যটকদের আদর্শ মানের সেবা নিশ্চিত করতে যথাযথ ভাবে ময়লা আবর্জনা ডিসপোজাল করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর উপায়ে পানি নিষ্কাশনের কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সভায় উপস্থিত সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি সভায় চলমান ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে তিনি গতকাল কক্সবাজারে অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত অভিযানের যে চিত্র তুলে ধরে বলেন এই চিত্র পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে আমরা যে স্ট্যান্ডার্ডে নিয়ে যেতে চাই তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আমাদের সমুদ্র সৈকতের আশেপাশের এলাকাসহ সংশ্লিষ্ট শহরের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ করতে হবে। তিনি হোটেল-রেঁস্তোরাসমূহে মূল্য ঘোষণা দেয়া, গ্রাহকদের ফিডব্যাক নেওয়া এবং তার আলোকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা, পণ্যের সোর্স নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে আমাদের প্রয়োজন সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এ লক্ষ্যে অধিদপ্তর কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচারণার কথা বলেন। তিনি জানান, ভোক্তাস্বার্থে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, BSTI, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ একসাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।
মুক্ত আলোচনায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সভায় উপস্থিত সকলের ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।
পরিশেষে তিনি কক্সবাজারকে একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়তে সকলের সহযোগিতা কামনা করে এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।