রিয়াজ উদ্দিন:
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সাগরতীরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দেশের দূর—দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু। তাদের পদচারণায় মুখরিত সাগরতীর। বালিয়াড়ি পেরিয়ে সাগরে নামছেন পর্যটকরা। কেউ এসেছেন দলবেঁধে, কেউ এসেছেন পরিবার—পরিজন নিয়ে, আবার কেউ এসেছেন একাই। চলতি পর্যটন মৌসুমে বিদেশি পর্যটকদেরও দেখা যাচ্ছে কক্সবাজারে। সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা ও কলাতলী সহ তিনটি পয়েন্টে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা এক পর্যটক বলেন, ঢাকা শহরে বাড়ি থেকে স্কুল এভাবে কেটে যায়। কোথাও ঘুরতে যেতে পারি না। এখন কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি, খুব ভালো লাগছে। পানিতে খেললাম, বালিয়াড়িতে দৌড়াচ্ছি, খুব মজা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে সরকারি চাকুরিজীবী মনোয়ার হোসেন বলেন, ক্লান্তি কাটানো সবচেয়ে ভালো স্থান বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে আসলাম। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, ইনানী, হিমছড়ি ও পাতুয়ারটেক ঘুরব দুই দিন। তারপর বাড়িতে ফিরে যাব। এই সৈকত অনেক পরিষ্কার। এছাড়াও এত মানুষের ভিড় খুব ভালো লাগছে। এখান থেকে ঘুরে গিয়ে বন্ধুদের সবাইকে বলব, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। সাগরতীর ঘুরে দেখা যায়, বালিয়াড়ির চেয়েও পর্যটকের চাপ বেশি সাগরজলে। সমুদ্রস্নান আর প্রিয়মুহূর্তগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করতে মেতেছেন তারা। তবে, সন্ধ্যার পর বিনোদনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান পর্যটকরা।
পালংখালী থেকে রিদোয়ান নামে এক পর্যটক বলেন, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলো বেশ ভালো সময় কাটে। কিন্তু সন্ধ্যার পর আর ভালো লাগে না। এখনো বিনোদনের তেমন কিছু নেই।
শুক্রবার সকাল থেকেই সূযোর্দয়—সূর্যাস্তের বেলাভূমিতে আসতে থাকে ভ্রমণ বিলাসী শত শত মানুষ। আগত দর্শনার্থী ও পর্যটকদের উম্মাদনায় সৈকত এলাকা মিলনমেলায় পরিণত হয়। মেতে ওঠে আনন্দ উল্লাসে। অনেকে সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পর্যটকদের এমন ভিড়ে বুকিং রয়েছে কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেল—মোটেল রিসোর্ট। কেনাকাটায় ধুম পড়ে গেছে ঝিনুক ও আচারের দোকানগুলোতে। খাবার হোটেলগুলোতেও লক্ষনীয় ভিড় দেখা গেছে। অন্যদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে। রাতে হালকা কুয়াশা দিনে বেড়েছে রোদের তাপ। এরপরও যেন আনন্দের শেষ নেই।
হোটেল মোটেল জোনের কর্মকতার্রা দাবী করছেন যে, সারাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যার কারণে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যটকের ভিড় একটু কম থাকবে। তবে ডিসেম্বর নাগাত পর্যটক আসবে এবং পূর্ণ মৌসুম ফিরে পাবে। তবে বিগত দিনগুলোতে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বিশেষ দৃশ্যমান ছিল।
তাছাড়া সমুদ্র সৈকতে রয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পর্যটকদের কোন ধরনের অসুবিধা রোধে কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষনিক দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া সমুদ্রের তীরে বসানো হয়েছে পুলিশ বক্স। পুলিশের পাশাপাশি লাইফ গার্ড ও নজর কেড়েছে মানুষের মনে। জোয়ার—ভাটার সময় সমুদ্রে গোসলরত মানুষদের সার্বক্ষনিক সতর্ক করে দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে তারা।