কাইছারুল ইসলাম, মহেশখালী।।
বিশ্বের অন্যতম পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী উপজেলার
ধলঘাটা একটি সুপরিচিত ইউনিয়ন। ২য় সিঙ্গাপুর খ্যাত মাতারবাড়ীর পাশে এটির অবস্থান। এখানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ (বেজা), সি পি পি গ্যাস লাইন, ধলঘাটা-মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর হলে ও দীর্ঘদিন সংস্কার হয় নি ধলঘাটার প্রধান সড়কটি। সড়ক পথে জেলা বা চট্টগ্রাম যাওয়ার একমাত্র প্রধান সড়ক এটি।
ধলঘাটা প্রবেশ করতেই রাস্তার বেহাল দশা। চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন গুলো।
প্রান্তিক ইউনিয়ন ঘলঘাটার অবস্থা এমনটাই।
ধলঘাটার প্রবেশ পথ নাছির মোহাম্মদ ডেইল থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে রাস্তায় কোন ইট সলিং নেই। এরপরে ইট দেখা গেলেও কবে সংস্কার হয়েছে তা কেউ জানে না। ছোট বড় খানাখন্দে ভরা সড়কটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধলঘাটার এই প্রধান সড়কটি খানা-খন্দে ভরা। বিশেষ করে নাছির মোহাম্মদ ডেইল, উত্তর মহুরীঘোনা, দক্ষিণ মহুরী ঘোনা, পানির ছড়া, বনজামিরা ঘোনা, শরইতলা এলাকায় কোন ইট সলিং হয় নাই। দক্ষিণ সুতুরিয়া, সুতুরিয়া বাজার, সাপমারার ডেইল ইট সলিং হলে ও খানাখন্দে ভরা। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে জেলা বা চট্টগ্রামে যোগাযোগ করতে নিত্যদিন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। এমন অবস্থা হলেও রাস্তা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেননি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লক্কর-ঝক্করের কারণে যানবাহন আসতে চাই না রাস্তাগুলো দিয়ে। ২৫ বছরে রাস্তায় ইট সলিং না হওয়াই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা।
বর্ষাকালে প্রধান সড়কটি নদী-নালায় পরিণত হয়েছে। এই রাস্তাগুলো কখনো পাকাকরণ হয় নাই। আমরা সাহায্য চাই না, রাস্তা পাকাকরণ চাই। এ অবস্থায় রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সিএনজি চালক শফিউল আলম বলেন, ভাঙ্গা রাস্তার কারণে গাড়ি প্রায় বিকল হয়ে পড়ছে। বড় বড় গর্তে গাড়ি পড়ে আটকে যায়। যার ফলে যাত্রী নিয়ে চলাচলে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। স্বীকার হতে হয় বিভিন্ন দূর্ঘটনার। দৈনিক যত আয় হয়,গাড়ী সংস্কারে এর দ্বিগুণ ব্যয় হয়।
পথচারী রণধীর শীল নামে একজন বলেন, ধলঘাটার সবকিছু বদলে গেছে, বদলায় নাই রাস্তা। বৃষ্টি নামলেই রাস্তা আর রাস্তা থাকেনা খালে পরিণত হয়। অন্তত ইট সলিং এর ব্যবস্থা করা হলে হয়ত ভালভাবে চলাফেরা করতে পারব।
ছলছল চোখে লবণ চাষী নুরুল হোসাইন বলেন, আদিযুগে বসবাস করছি, যে যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিল না। ধলঘাটায় কত উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে কিন্তু রাস্তা দিয়ে বর্ষাকালে মানুষ চলাচল করতে পারে না। ডুবে যাই পানিতে অথচ নির্বাচন আসলে কত চেয়ারম্যান প্রার্থী রাস্তা পাকা করে দিবে বলেন। একবার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন গাড়ি পাই নাই বলে লবণ চাষী নুরুল হোসাইন।
ধলঘাটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছালেহ আহমেদ জানান, রাস্তা পাকা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। গায়ে কাদা লেগে যায়, বর্ষাকালে নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছেন অনেক শিক্ষার্থী। পানিতে ডুবে সংকটাপন্ন হয়েছে অনেকের।
এই বিষয়ে ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, এটা রাস্তাটি বারবার হাত বদলের কারণে হচ্ছে না। প্রথমে ওয়াল্ড ব্যাংক করার কথা থাকলে ও হয় নি। বর্তমানে জাইকার অর্থায়নে রাস্তাটি হবে। তবে ধলঘাটা ইউনিয়ন বাসী একটা টেকসই রাস্তা পাবে। তিনি একটি টেকসই রাস্তা করার জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতেছেন বলে জানান।
মহেশখালী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে জানান, প্রথমে আরসিআইপি এর একটি প্রজেক্টে রাস্তাটি হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে রাস্তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাই পরবর্তী ৫ ফুট উঁচু করে রাস্তা করার কথা থাকলে ও বিভিন্ন কারণে হয় নাই।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জাপানি সংস্থা জাইকার একটা প্রজেক্ট হচ্ছে। এটার জন্য আগামীকাল আমরা দেখতে যাব। এটার মাধ্যমে দ্রুত কাজ শুরু হতে পারে বলে তিনি জানান।