সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশ কক্সবাজার এর আহবায়ক কমিটি গঠিত:খোকন আহবায়ক ,শাহীন যুগ্ন আহবায়ক ও বাবুল সদস্য সচিব রিসার্চ ইনিশিয়েয়েটিভস্ বাংলাদেশ(রিইব) অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত সবার আগে ৫ আগষ্টের হত্যাকারীদের বিচার পরে অন্য কিছু-কক্সবাজারে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান কক্সবাজার পৌরসভার ইনডোরে বেলাল উদ্দীন চৌধুরী ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন ঈদগাঁও আমির সুলতান এন্ড দিল নেওয়াজ বেগম হাইস্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান  সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক বদলী হওয়ায় নতুন প্রশাসক শহীদুল ইসলামকে  নিয়োগ  নাইক্ষ্যংছড়িতে সেতুর অভাবে ২০ গ্রামের হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে মাতারবাড়ীতে শ্বশুরবাড়ি থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের আগমনে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরলেন-অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী মহেশখালীতে সাগরে মিলল তরুণের লাশ, পরিবারের দাবি হত্যা

উখিয়ায় লোকালয়ে বুনো হাতির পাল, সাধারণ মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত

এম আর আয়াজ রবি
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪
  • ৮৭ বার পঠিত

।। এম আর আয়াজ রবি, বিশেষ প্রতিবেদক ।।
প্রায় সপ্তাহব্যাপী প্রবল ভারী বর্ষণে, পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানরত বুনো হাতির দলের নিরাপত্তাহীনতা ও খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়ে লোকালয়ে চলে এসেছে। এদিকে গত কিছুদিন যাবত কক্সবাজারসহ সারা দেশের উপর দিয়ে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো থেমে থেমে আবার কখনো অঝোর ধারায় এই বৃষ্টিতে এবার বন থেকে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে এলো বুনো হাতির পাল। ইতিমধ্যে পাহাড়ি ঢালু জনপদ পিচ্ছিল, ভঙ্গুর ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাহাড়খেকো ও বনখেকো মানুষের পাহাড় কর্তন ও বনভুমি বেদখল এবং বন্যপ্রানির অভয়ারণ্য উজাড় করে মানুষের আবাসস্থল নির্মানের কারণে অত্র অঞ্চলে প্রাণপ্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবার উপক্রম হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল তৈরিতে বন বিভাগের ভুমি ব্যবহৃত হওয়ায় বনভুমি সংকুচিত ও সীমিত হবার কারণে হাতির পালসহ অন্যান্য বন্য প্রাণি লোকালয়ে চলে আসছে।

গত রবিবার (৩০-জুন) এমনই এক ঝড়ো বৃষ্টির দিনে, উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের তেলখোলা নামক স্থানে পাহাড়ি দূর্গম এলাকায় একদল বুনো হাতির দেখা মিলেছে। হাতির পাল দেখার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় যুবক মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করলে ব্যাপক সাড়া পায় নেটিজেনরা।
জানা গেছে, ঝাঁকে ঝাঁকে খাবারের সন্ধানে ও নিরাপদ আশ্রয়স্থলের খুঁজে প্রায়ই লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসে হাতিগুলো। এ সময় বিভিন্ন আকারের হাতির বাচ্চা হাতির পালের সাথে দেখা মেলে। স্থানীয় নকীবের বরাতে জানা যায়, ‘ইতিপুর্বেও কয়েকবার এই হাতির পালটি দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে হাতির আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় খাবারের খুঁজে ঘুরতে ঘুরতে লোকালয়ে চলে আসে।অনেক সময় কাঙ্খিত খাবার না পেয়ে তান্ডব চালায় খেত খামার, বাড়িঘর, পানের বরজ, কলা বাগান, মাঠের ধান খেতে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক অভিভাসন সংস্থা ( আইওএম) এর তথ্যমতে, রোহিঙ্গা আশ্রয়ে প্রায় ৭০০০ হেক্টর বনাঞ্চল নষ্ট হয়েছে, কিন্তু জাতীয়ভাবে হিসেবে তা ১২ হাজার একর বলে জানা যায়। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতি চলাচলের ১১টি করিডোর রয়েছে। এসব করিডোরের বেশিরভাগই এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল ক্রমশ সীমিত হওয়ায় ও বন্যপ্রাণী চলাচলে প্রতিবন্ধকতার কারণে মানুষ ও হাতির সংঘর্ষে গত একবছরে প্রান গেছে প্রায় ১১ জনের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১১-ডিসেম্বর-২২, সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের তেলখোলার চাদরখোলা নামক গহীন অরন্যে হাতীর পায়ে পৃষ্ট হয়ে স্থানীয় আবুল কালামের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম (৩৫) নামক এক গৃহবধুর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছিল। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সিরাজ মিয়া বলেন, ছেনোয়ারা তার ২ সন্তানকে নিয়ে ঐদিন রাতে স্বামী আবুল কালামসহ এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে একটু রাতের অন্ধকারে হাতে টর্চের আলো জ্বালিয়ে চাদর খোলা নামক সরু স্থানে পৌঁছে। হঠাৎ করে একটি বন্য হাতি কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই তেড়ে আসলে সাথে থাকা ১ ছেলে ও উনার স্বামী দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ঢালুতে পালিয়ে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ভিক্টিমের কোলে থাকা ছেলেসহ তিনি হাতির সামনে পড়ে যান। তৎক্ষনাৎ ভিক্টিমে উনার কোলে থাকা শিশুকে পার্শ্ববর্তী স্থানে ছুড়ে মারেন, উনি নিজে হাতির সামনে থেকে হাতির কাছে আত্মসমর্পণ করেন। কোন কিছু বুঝে উঠার পুর্বেই হাতির শুড় দিয়ে ভিক্টমকে প্যাচিয়ে উপরে তুলে আছাড় মারে এবং পরে পায়ে পিষ্ট করে দ্রুত হাতিটি স্থান ত্যাগ করে। এখানে উল্লেখ্য যে, ভিক্টিম মা-তার কোলে থাকা শিশুকে এক পাশে ছোড়ে মেরে নিজকে একপ্রকার আত্মাহুতি দিয়ে পুত্রস্নেহের কাছে মায়ের প্রাণ বিসর্জন দেন। ভিক্টিম মা আবারো প্রমান করলেন সন্তানের প্রতি মায়ের চিরন্তন অকৃত্রিম ভালোবাসা।
লোকালয়ে হাতি আসার ব্যাপারে পালংখালী ইউনিয়নের স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি কামাল মেম্বার বলেন, ‘অনেকদিন পরে আবারো বন্য হাতি লোকালয়ে চলে এসেছে। এভাবে বনের হাতি লোকালয়ে চলে আসায় স্থানীয়রা মারাত্মক জীবন জীবিকার হানির সম্মুখীন। অনেকেই প্রানের ভয়ে প্রাত্যহিক কাজ কর্মে যেতে পারছেনা। সন্ধ্যার পরে কেউ বাইরে যেতে পারছে না’।

এ ব্যাপারে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, ‘২০১৭ সালের রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে উখিয়া রঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্টির জন্য বনের জায়গা ছেড়ে দেবার পরও, উখিয়া থাইংখালী বিটের অধীনে প্রায় ২৩০ হেক্টর জমিতে সফল সবুজ বনায়ন হয়েছে। বনবিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারি ও এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবুজ হওয়ায় বন্যপ্রাণিগুলো আবারো তাদের জায়গায় ফিরতে শুরু করেছে’।
বন্যহাতিগুলো লোকালয় চলে আসার কী কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্য হাতি লোকালে আসেনি, বরং বন্যহাতির আবাসস্থলে লোকালয় সৃষ্টি হওয়ায়, তারা এলাকা ছেড়ে দূর গহীণ অরণ্যে চলে গেছিল। এখন নতুন করে বনবিভাগের সবুজ বনায়ন করার কারণে বন্য হাতিগুলো তাদের পুরনো আবাসস্থলে ফিরে আসছে’।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সরওয়ার আলম বলেন, ‘শীত ও বর্ষা মৌসুমে ধান, খেত খামারের শস্যাদি খাওয়ার জন্য পাহাড় থেকে হাতি নেমে আসে লোকালয়ে। যেখানে হাতির বসবাস ছিলো সেখানে মানুষের আনাগোনা বাড়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। এখন জনসংখ্যা বাড়ার সাথে বসবাসের স্থানের স্বল্পতার কারনে মানুষ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে বসবাস শুরু করায় তারা বাস্তসংস্থান সংকটে পড়ছে’।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs