সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
কক্সবাজারের উখিয়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর বন বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী কামালসহ দুইজন এবং পৃথক আরেকটি অভিযানে একটি বিদেশী পিস্তল ও দেশীয় তৈরী রিভলবারসহ দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল)সংবাদ সন্মেলনে র্যাব-১৫ এর দেয়া সূত্রে বলা হয়েছে,‘‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’’ এই স্লোগান নিয়ে র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, জলদস্যু, ডাকাত, চুরি-ছিনতাই, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গী দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদকসহ দেশে বিরাজমান বিভিন্ন অপরাধ নির্মূলে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। র্যাব-১৫, দায়িত্বাধীন কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় বিরাজমান এ সকল অপরাধসহ আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে প্রতিনিয়তই অত্যন্ত অগ্রণী ভ‚মিকা পালন এবং নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উখিয়া থানাধীন রাজাপালং ইউপিস্থ হরিণমারা এলাকায় স্থানীয় হেলাল, গফুর ও বাবুলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা জানায় যে, এই চক্রের অধীনে প্রায় ১০/১২ টি ডাম্পার ও কয়েকটি মাটিকাটা ড্রেজার রয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে বন কর্মকর্তাদের অগোচরে পাহাড়ের মাটি কেটে এনে প্রতি ডাম্পার ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিভিন্ন লোকজনের নিকট জমি ভরাট করার জন্য বিক্রি করে থাকে। চক্রের মূল হোতারা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রেখে বাকি টাকা ডাম্পারের মালিকদের গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাবদ পরিশোধ করে দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা আরো জানায় যে, বন কর্মকর্তাদের আগমন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে এই চক্রের লোকদেরকে নিয়োগ করে রাখা হতো।
নিহত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হরিণমারা বন অঞ্চলের দায়িত্বপূর্ণ বিট কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি একজন সাহসী ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে সর্ব মহলে পরিচিত ছিলেন। বন বিভাগের তথ্য মতে, গত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি অনেকগুলো অভিযান পরিচালনা করে পাঁচটি মাটি কাটার ড্রেজারসহ কয়েকটি ডাম্পার আটক করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে বন আইনে কয়েকটি মামলা দায়ের করেছেন। যার ফলে এই বন কর্মকর্তা এই অপরাধী চক্রের চক্ষুশূলে পরিণত হন এবং অপরাধীরা তাকে শায়েস্তা করার জন্য নানান পরিকল্পনা করে থাকে।
গত ২৯ শে মার্চ বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ তার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বন বিভাগের আরও কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়ের মাটি বোঝাই করা অবস্থায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার কামালের একটি ডাম্পার আটক করেন এবং এই ঘটনায় কামালসহ চারজনের বিরুদ্ধে বন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ফলে কামালসহ অন্যান্য আসামীরা বন কর্মকর্তা সাজ্জাদের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন। স্থানীয় লোকদের সূত্রমতে জানা যায় যে, ঘটনার আগের দিন কামাল, হেলাল, সৈয়দ আলমসহ এ চক্র আরো কয়েকজন বন কর্মকর্তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
গ্রেফতারকৃত আসামি ও স্থানীয় লোকদের তথ্য মতে জানা যায় যে, গত ৩১ মার্চ রাত আনুমানিক ০২.০০ ঘটিকার সময় ঘাতক বাপ্পি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ড্রাইভার কামালসহ দুইজন হেল্পার’কে সাথে করে সৈয়দ আলমের মালিকানাধীন একটি ডাম্পার নিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটার উদ্দেশ্যে বের হন। ডাম্পারের মালিক সৈয়দ আলম বন কর্মকর্তাদের আগমনের উপর নজরদারি রাখার জন্য একটি বাজারে অপেক্ষা করতে থাকে। ইতোমধ্যে পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়ে সাহসী বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ বন বিভাগের আরেক সদস্য মোঃ আলীকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাপ্পি ও কামাল মাটি বোঝাই ডাম্পার নিয়ে ফেরত আসার সময় স্থানীয় ফরিদ আহম্মদের দোকানের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে বন কর্মকর্তা সাজ্জাদকে আসতে দেখে। তখন ডাম্পারের ড্রাইভার বাপ্পির পাশে বসে থাকা কামাল পূর্ববর্তী ঘটনার আক্রোশের জেরে এবং পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গাড়ি না থামিয়ে বন কর্মকর্তাকে গাড়ি চাপা দেওয়ার জন্য বাপ্পীকে নির্দেশ প্রদান করে। ঘাতক বাপ্পি গাড়ি না থামিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ ও তার সহযোগীকে গাড়ি চাপা দেয়। ফলে ড্রাম্পারের চাপায় মাথায় গুরতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদ মৃত্যুবরণ করেন এবং সাথে থাকা সহযোগী মোহাম্মদ আলী আহত হন। বর্ণিত হত্যাকান্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ফেসবুকসহ স্থানীয় এবং জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একই সাথে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতার ও হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী ফাঁসিয়াখালীতে মানববন্ধন করেন।
পরবর্তীতে গত ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখে এ ঘটনায় দক্ষিন বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: শফিউল আলম বাদী হয়ে এজহারনামীয় ১০ জন এবং অজ্ঞাত ০৫ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়া মাত্রই র্যাব-১৫, কক্সবাজার ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ১৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ আনুমানিক দুপুর ১৬.৩০ ঘটিকার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১৫, কক্সবাজারের একটি চৌকস আভিযানিক দল পৃথক স্থান হতে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ কামাল’কে চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড হতে এবং হত্যার সহযোগী হেলাল’কে কক্সবাজার উখিয়া কোটবাজার এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদ্বয় মোঃ কামাল ও হেলাল উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিল মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিস্তারিত পরিচয়ঃ
(১) মোঃ কামাল উদ্দিন (৩৯), পিতা-শাহ আলম, সাং-হরিণমারা, ০৪ নং রাজাপালং ইউনিয়ন, থানা-উখিয়া, জেলা- কক্সবাজার।
(২) হেলাল উদ্দিন (২৭), পিতা-নূর আলম মাইজ্জা, সাং-তুতুরবিল, ০৪ নং রাজাপালং ইউনিয়ন, থানা- উখিয়া, জেলা- কক্সবাজার।
আরো একটি পৃথক অভিযানে ০২ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ০৯ রাউন্ড গোলাবারুদসহ কক্সবাজার সদর এলাকার ডাকাতি, ছিনতাই, ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত দুইজন’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫।
গত ০৯ মার্চ ২০২৪ তারিখ সময় আনুমানিক রাত ১১.০০ ঘটিকায় কক্সবাজার সদর থানাধীন ঝিলংজা ইউপির ০১ নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত পশ্চিম লারপাড়া ইসলামাবাদ এলাকায় জোরপূর্বক ভ‚মি দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। বর্ণিত বিষয়কে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ০৭ জন এর নাম উল্লেখ করে ও ৫/৬ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা রুজু হয়। ঐ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১১ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখ মধ্য রাতে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে বর্ণিত এলাকায় গোলাগুলি করে। সেই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ আমাদের নজরে আসে। উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়া মাত্রই র্যাব-১৫, কক্সবাজার ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। বর্ণিত গোলাগুলির ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের নাম ঠিকানা ও তথ্য সংগ্রহসহ তাদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করি। কিন্তু আসামীরা ঘটনার পরবর্তী সময়ে আত্মগোপনে চলে যায়। র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর একটি চৌকস টিম গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে জানতে পারে যে, গোলাগুলির ঘটনায় জড়িত মোঃ জাহেদ হোসেন ও ইয়াছিন আরাফাত গত ১৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ চকরিয়া হতে কক্সবাজার পৌরসভা এলাকার উদ্দেশ্যে আসছে। সেই মোতাবেক র্যাব-১৫ এর গোয়েন্দা টিম তাদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে তৎপর হয় এবং অভিযান পরিচালনা করে অদ্য ১৬ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ আনুমানিক রাত ০২.১০ ঘটিকার সময় কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন ঝিলংজা এলাকা হতে ১। মোঃ জাহেদ হোসেন (২৫), পিতা- আব্দুল জলিল ২। ইয়াছিন আরাফাত (২৬), পিতা- মোর্শেদ আলম, উভয় সাং-দক্ষিন রুমালিয়ার ছড়া, ৭নং ওয়ার্ড, থানা-সদর, জেলা-কক্সবাজারদ্বয়’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতার পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, উপরোল্লিখিত পশ্চিম লারপাড়া ইসলামাবাদ এলাকায় প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনার সাথে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং ঐ ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি অস্ত্র ও গোলাবারুদ তাদের হেফাজতে রয়েছে মর্মে তারা আমাদের নিকট স্বীকার করে। পরবর্তীতে ধৃত আসামীদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উক্ত ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের নিমিত্তে ধৃত আসামীদেরসহ কক্সবাজার পৌরসভা ০৬ নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত দক্ষিন রুমালিয়াছড়া এলাকাস্থ কক্সবাজার জেলা কারাগারের উত্তর-পূর্ব পার্শ্বে মাটিয়াতলি এলাকার কাটা পাহাড়ের চূড়ায় অভিযান পরিচালনা করি। অতঃপর আনুমানিক রাত ০৪.১০ ঘটিকার সময় উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুক্ষে এবং ধৃত আসামীদের দেখানো মতে কাটা পাহাড়ের চূড়ায় মাটির নিচে গর্তে গুজানো অবস্থা থেকে ০১ টি বিদেশী পিস্তল, ০১ টি দেশীয় তৈরী রিভলবার, ০৯ রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ০১ টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। ধৃত ব্যক্তিদ্বয় জানায়, তারা পরস্পর যোগসাজসে বিভিন্ন কৌশলে বিদেশী ও দেশীয় অস্ত্র-গোলাবারুদ টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকা হতে সংগ্রহ করে এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারসহ উক্ত অস্ত্র-গোলাবারুদ বিভিন্ন দুস্কৃতিকারীদের নিকট বিক্রয় করে থাকে। অদ্য উপরোল্লিখিত অস্ত্র ও কার্তুজসহ র্যাবের আভিযানিক দলের কাছে ধৃত হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মোঃ জাহেদ হোসেন ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে কক্সবাজারের বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে থাকে। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় একটি হত্যা মামলাসহ রামু থানায় একটি ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা রয়েছে। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, সে কক্সবাজার পৌরসভা এলাকায় প্রায় সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরাঘুরি করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক নিরীহ মানুষের জমি অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালীরদের দখল করিয়ে দেয়। তার বিরুদ্ধে এলাকায় বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে গোলাগুলি করার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপের লিডার সাদ্দাম জেলে থাকায় গ্রেফতারকৃত মোঃ জাহেদ হোসেন গ্রুপটির গ্রুপ লিডার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত ইয়াছিন আরাফাত সাদ্দাম বাহিনী গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সে বর্ণিত গ্রুপের গ্রুপ লিডার মোঃ জাহেদ হোসেন এর মূল সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকে।
গ্রেফতারকৃত ও পলাতকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।