বার্তা পরিবেশক:
দীর্ঘদিন ধরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চলাচলের রাস্তা দখলে নিয়ে বাঁধা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে জেলা জজ আদালতের নেজারত শাখার কর্মচারী জাহেদের বিরুদ্ধে। মেয়রের নির্দেশে পৌরসভার নির্মিত রাস্তাটি উদ্ধারে গেলে হামলা করে পৌর কর্মচারীকে। আদালতের নির্দেশে রাস্তাটি বুঝিয়ে দিতে গেলে সদর থানার পুলিশ কর্মকর্তার সামনে মারধর করে ভুক্তভোগীদের। বিজ্ঞ আদালতে রাস্তাটি উন্মুক্ত করার অঙ্গিকার করেও আদালত অবমাননা করছে এই ভূমিদস্যু চক্র। শহরের বিজিবি ক্যাম্প পেতা সওদাগর পাড়ার বসবাসরত প্রায় পাঁচটি পরিবারকে ছয় বছর ধরে অবরুদ্ধ রাখে স্থানীয় জাহেদুল আলমের নেতৃত্বে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট। সোমবার ১২ আগস্ট কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী লিয়াকত আলী চৌধুরী ভুট্টো। এসময় তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকার পদত্যাগের পর কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে আমার জমি দখলে নিতে আমাকে হামলা চালায়’।
জানা যায়, ভুক্তভোগী স্থানীয় লিয়াকত আলী ভুট্টোর স্ত্রী নাজমা চৌধুরী তাদের ক্রয়কৃত জমির চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে সংরক্ষিত করেছিলো। এরপর থেকে পৌরসভার অর্থায়নে নির্মিত নাজমাসহ আশেপাশের আরও পাঁচ পরিবারের চলাচলের রাস্তা জোরপূর্বক দখলে ছিল জাহেদ গং। লিয়াকত বলেন, “নিজের জমিতে ঘর নির্মাণ করতে গেলে পুনরায় বাঁধা দেয় জাহেদ গং। নির্মাণসামগ্রী নিতে বাধা ও আমাকে দফায় দফায় হামলা করে। পরে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিলে রাস্তা ফেরত দেওয়ার কথা বলে প্রথমে অস্থায়ী টিনের বেড়া ও পরে ইটের প্রাচীর দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে জাহেদ।” এনিয়ে চলাচলের রাস্তা ফেরত পেতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরে লিয়াকত। থানায় দায়ের করে চাঁদাবাজি মামলা। যে মামলা নং সি আর-৪৭৪/২০২১ইং।
লিয়াকত আরো জানান, একপর্যায়ে বিজ্ঞ আদালতে চলমান মামলার শুনানি করে ২০২১ সালে তুষার কান্তি রুদ্রের বেঞ্চ চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করার রায় দেন। আদালতের নির্দেশের পরেও রাস্তা ফিরে না পাওয়ায় ভুক্তভোগী লিয়াকত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পুনরায় আবেদন করলে তৎকালীন এডিএম সদর থানাকে রাস্তা বুঝিয়ে দেওয়ায়র নির্দেশ দেন।২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদরের সহকারী ভূমি নু-এমং মারমা মং ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীদের রাস্তা দখল উচ্ছেদ করে বুঝিয়ে দেন। এর কিছুদিন যেতে নাযেতেই পুনরায় দখলে নিয়ে ইটের দেওয়াল নির্মাণ করে বাঁধা সৃষ্টি করে জাহেদ গং। পরে ভুক্তভোগী লিয়াকতের দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলা নিষ্পত্তি দিতে আদালতে চলাচলের রাস্তা ফেরত দিবে বলে অঙ্গিকার করেন জাহেদ গং। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তি দেবার পর পরেই আদালত অবমাননা করে আবারও রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখে তারা।
জানাযায়, মৃত ইদ্রিস পুত্র সাব রেজিষ্ট্রি কার্যালয়ের মাস্টাররোল কর্মচারী তোফাইলুর রহমান(৩১), আইনজীবী সহকারী ওসমান সরওয়ার রাসেল(৩৫), ছাদেকুর রহমান(২৫), মৃত এজহার মিয়ার পুত্র হাফেজ আহমদ (৫৫), মৃত মুসলিমের পুত্র আইনজীবী সহকারী সোহেল রানা রিজিভী (৩৭), জজকোর্টের নেজারত শাখার জারিকারক জাহেদুল আলম (৩৯), মৃত বশিরের পুত্র কামাল পাশা(৪০), ও জামাল উদ্দিন(৫০)। অভিযুক্ত প্রত্যেকেই আদালতের নাম ভাঙিয়ে নানান অপকর্ম চালিয়ে আসার অভিযোগ আছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী লিয়াকতকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার হয়। এনিয়ে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন লিয়াকত।
সদর মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস বলেন, আদালতের নির্দেশে চলাচলের রাস্তা বুঝিয়ে দিতে গেলে অভিযুক্তরা পুলিশের সামনেই হামলা করে ভুক্তভোগী লিয়াকতকে।
স্থানীয়রা বলছেন, লিয়াকতসহ অন্যান্যরা চলাচলের রাস্তা দাবী করলে বারবার মারধরের স্বীকার হচ্ছে। পৌরসভার অর্থায়নে নির্মিত রাস্তা দখলে নিয়ে নিজেদের দাবী করছে। দীর্ঘদিনের এমন অমীমাংসিত বিষয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় সংঘাতে জড়িয়ে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও জাহেদ গংয়ের হুমকির মুখে লিয়াকত সহ পাঁচ পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে দাবী করেন।